ksrm-ads

২৭ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

চট্টগ্রাম উত্তরের ছাত্রলীগের কমিটিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ, অসহায় তপু-রেজাউল

বাংলাধারা প্রতিবেদক»

দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে প্রকাশ করা হয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। রোববার (৩১ জুলাই) রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ৩১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ কমিটিকে শোকের মাসে ‘সুখের কমিটি’ বলেও উল্লেখ করছেন অনেকে। এদিকে কমিটিতে শুধু সহ-সভাপতি পদেই আছে ৮৩ জনের নাম। কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে প্রায় দীর্ঘ ৪ বছর পর গঠিত হওয়া পূর্ণাঙ্গ এ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন অপরিচিত এবং সবেমাত্র রাজনীতিতে আসা অনেকেই। যাদের অনেকের রাজনীতির বয়স মাত্র ৬ মাস থেকে এক বছর।– এমন অভিযোগ কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশ নেতাদের।

জানা যায়, ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তানভীর হোসেন তপু ও রেজাউল করিমকে মনোনীত করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ব্যাপারে বারবার দুই শীর্ষ নেতা চেষ্টা করলেও সে কমিটি প্রকাশ হয়েছে প্রায় ৪ বছর পর।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ব্যাপারে বারবার কেন্দ্রীয় দুই নেতা আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের কাছে ধর্ণা দিলেও সেটি প্রকাশ হয় দীর্ঘ কালক্ষেপনের পর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০ জনের কমিটি কেন্দ্রে জমা হলেও সেটি বেড়ে হয়ে যায় ৩১৬ জনে। কমিটিতে সহ-সভাপতি পদেই আছে ৮৩ জনের নাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং অন্যান্য সম্পাদকীয় ও উপ সম্পাদকীয় পদে ১৮৬ জন রয়েছেন। সদস্য পদে ২৩ জন স্থান পেয়েছেন। এছাড়া নামের ভুলের কারণে অনেকেই এখনো নিশ্চিত হতে পারছেন না কমিটিতে অন্তর্ভূক্তি হয়েছেন কিনা।

মানা হয়নি প্রটোকল, উত্তরের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে অসহায় তপু-রেজাউল:

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে নিজেদের পছন্দের লোকদের কমিটিতে নিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রে তোড়জোড় শুরু করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসা নেতৃবৃন্দ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রে প্রকাশ ছাড়া পড়ে থাকে কমিটির তালিকা। এসব কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে অসহায় হয়ে পড়ে তপু রেজাউল।

প্রকাশিত উত্তর জেলার কমিটিতে দেখা যায়, সবেমাত্র রাজনীতিতে আসা অর্নাস প্রথম বর্ষের এক ছাত্র কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পেয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের পদ। এছাড়া এসব কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠ চষে বেড়ানো ছাত্রনেতারা পেয়েছেন সদস্য পদ। কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘মাই ম্যান’রা পেয়েছেন সহ-সভাপতি ও অন্যান্য মূল পদ। এসব নেতাদের কথা রাখতে গিয়ে মানা হয়নি কোনো প্রটোকল।

কমিটির বিরোধীতাকারীরাও আছেন কমিটিতে:

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটির বিরোধীতা করে আসছিলো একটি পক্ষ। গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে হাটহাজারীর পারভেজ তালুকদার আনসারীসহ আরও বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে বিক্ষোভ করেন। তবে সে পারভেজ তালুকদার আনসারীকেও করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহ-সভাপতি।

এছাড়া বিরোধীতাকারী আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে স্থান দেওয়া হয়েছে যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে।

সূত্র জানায়, পারভেজ তালুকদার আনসারী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্যকে সরাসরি দেন-দরবার করে থাকেন। কমিটিতের অন্তভূর্ক্তির পর নিজের ফেসবুক পোষ্টে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পোষ্ট করেন এই নেতা।

কেন্দ্রে ‘লবিং’ করে জায়গা পেয়েছেন প্রায় শতজন:

চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য নেতাদের আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে জায়গা পেয়েছেন শতজন। যাদের অনেকেই অপরিচিত মুখ। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ২০০ জনের তালিকা কেন্দ্রে পাঠালেও সেটি বেড়ে হয়ে যায় ৩১৭ জনে।

এই বিষয়ে উত্তরজেলা ছাত্রলীগে পদে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সবকিছু যদি কেন্দ্রে থেকে হয়ে যায় তাহলে রাজনীতি না করে কেন্দ্রে গিয়ে বসে থাকা অনেক ভালো। বিশেষ করে চট্টগ্রাম উত্তর থেকে কেন্দ্রিয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে একটি হযবরল কমিটি মেনে নিতে বাধ্য হলো চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। শুধুমাত্র ‘মাইম্যান’ কমিটি বাস্তবায়নের জন্য এসব কেন্দ্রীয় নেতারা মাত্র রাজনীতিতে আসা একটি বাচ্চা ছেলেকেও জয়-লেখক ভাইকে অনুরোধ করে নেতা বানিয়ে দিয়েছেন, যেটি উচিত নয়।

এই বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন তপু’র সাথে বারবার যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বাংলাধারাকে বলেন, ‘কমিটি আসল কেন্দ্র যেভাবে ভালো মনে করেছে সেভাবে করেছে। এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আমরা সবকিছু মিলিয়ে সন্তুষ্ট নই। এখানে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কিছুই করার নেই এটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত।’

বাংলাধারা/এসআর

আরও পড়ুন