ksrm-ads

৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে পদত্যাগ করলেন তরফদার রুহুল আমীন, স্বাগত জানালেন বারভিডা পরিচালক

bebcdbbfb-cfcbdbd

চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে পদত্যাগ করলেন তরফদার রুহুল আমীন, স্বাগত জানালেন বারভিডা পরিচালক

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যৈষ্ঠ সহ সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন। বুধবার (২৮ আগস্ট) সকালে তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি বরাবর লিখিতভাবে এই পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

এদিকে তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনকারী ব্যবসায়ীদের নেতা গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডা পরিচালক হাবিবুর রহমান।

২০২৩ সালের আগস্টে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৪ ব্যবসায়ী নেতা চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক হন। এরপর তাদের ভোটে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে তিন সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। তাদের সবাই চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের বলয়ের।

অভিযোগ আছে, কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের সেই সময়ই ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করেছিলেন প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। চেম্বারের ১১৮ বছরের ইতিহাসে পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগের সেটিই ছিল প্রথম ঘটনা। সেসময় তার পদত্যাগ নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল।

বর্তমান ২৪ পরিচালকের মধ্যে তরফদার রুহুল আমিনের পদত্যাগের ঘটনা প্রথম। বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যেই বেশিরভাগ পরিচালক পদত্যাগ করবেন বলে একাধিক পরিচালক জানিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের দাবি তোলেন সাবেক নেতারা।দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্ব ‘পরিবারতন্ত্রমুক্ত’ ও বর্তমান কমিটির পদত্যাগের দাবিতে ১৮ আগস্ট চেম্বারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে তারা।

২৫ আগস্ট আগ্রাবাদে অবস্থিত দেশের একমাত্র ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’র সামনে চট্টগ্রাম চেম্বারের ‘অবৈধ কমিটি’ বাতিল দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ‘বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন। সেই কর্মসূচি থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিটিকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার (২৮ আগস্ট) প্রথমবার চেম্বারের নির্বাহী কমিটি ও পরিচালক পদ থেকে কারও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আসল।

পদত্যাগের কারণ হিসেবে তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার উপলব্দি হয়েছে, ব্যবসায়ী সমাজের কাঙ্ক্ষিত অধিকার ও জরুরি সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম চেম্বার দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর কোনও ভূমিকা রাখতে পারছে না। এই কারণে আমি নিজেও আমার সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারিনি।’

‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ও দেশজুড়ে বন্যার সময়ও আমি আমার সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারিনি; ব্যবসায়ী সমাজকে সহেযাগিতা দিতে পারিনি। এটা আমাকে খুবই পীড়া দিচ্ছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হয়েছে, এই পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই শুভবুদ্ধির উদয়। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম চেম্বারকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরাতে ও পরিবারতন্ত্রমুক্ত করতে এই পদত্যাগ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করছি, সব পরিচালক পদত্যাগ করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইন (ডিটিও) অনুযায়ী চেম্বার পরিচালিত হবে। আমরা সেই নিয়মের পথ ধরেই আগাব। তৃণমূল ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে চট্টগ্রাম চেম্বার আবারও ভূমিকা রাখবে।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের ইতিহাস ১১৮ বছরের। ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনে ২০০৮ সালে প্রথম মেয়াদে সভাপতি হন এমএ লতিফ। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি সভাপতি ছিলেন।

চট্টগ্রাম চেম্বারে ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার সভাপতি ছিলেন মাহবুবুল আলম। ২০২৪ সালে এফবিসিসিআই সভাপতি নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম চেম্বার ছেড়ে দেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, সেই থেকে এই দুই নেতার বলয়ের বাইরের কারও পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল না।

২০১৩ সাল থেকেই চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্ব নির্ধারণ করে দিয়ে আসছিলেন সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ। তার বলয়ের বাইরে কারও পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ হয়নি সংগঠনটিতে।

চট্টগ্রাম চেম্বারে সর্বশেষ ২০২৩ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ২৪ পরিচালক।

তাদের প্রায় সবাই এই দুই নেতার বলয়ের ও পরিবারের সদস্য। নির্বাচনে পরিবারতন্ত্রের জের ধরে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। এ নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়, হৈ চৈ পড়ে যায় ব্যবসায়ী মহলে। চট্টগ্রাম চেম্বারের ১১৮ বছরের ইতিহাসে সেটি ছিল পদত্যাগের প্রথম ঘটনা।

‘পরিস্থিতি শান্ত হলে’ এমএ লতিফের আত্নীয়তার সুবাদে সেই পরিচালক পদে বিনাভোটে নির্বাচিত করে নিয়ে আসেন ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামকে। যিনি এখন বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি।

চেম্বারের বর্তমান কমিটিতে এমএ লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজ সভাপতি ও ওমর মুক্তাদির পরিচালক। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের মেয়ে রাইসা মাহবুব সহ-সভাপতি ও ভাই আলমগীর পারভেজ চেম্বারের পরিচালক।

কমিটিতে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান নুরুন নেওয়াজ সেলিমের মেয়ের জামাই বেনাজির চৌধুরী নিশান ও ছেলে মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই ঘুরে ফিরে নির্ধারিত কয়েকজন ব্যবসায়ী সেই বলয়ে থেকেই পরিচালক নির্বাচিত হচ্ছেন।

এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেক ক্ষোভ ছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেই ক্ষোভের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে এলো।

প্রসঙ্গত, সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দরে গুরুত্বপূর্ণ দুটি টার্মিনাল নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পরিচালনা করে আসছেন। দেশের অর্থনীতিতেও সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তরফদার রুহুল আমীনের মালিকানাধীন সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড।

আরও পড়ুন