চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে তালা দিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) কর্মীরা।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিভাগের অফিস ও পরীক্ষার হলে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এর ফলে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগের সভাপতি আসমা আক্তার। তিনি তালা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করেন।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০৪ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা চলাকালীন হাসিব ও হাবিব নামে দুই শিক্ষার্থীর নকল ধরেন দায়িত্বরত শিক্ষক ও বিভাগের সভাপতি আসমা আক্তার। পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেম। পরে তাদের পরীক্ষার খাতা রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠানো হলে এক বছরেও তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি শৃঙ্খলা কমিটি। এ কারণে দুই শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল আসেনি। এমনকি তারা তৃতীয় বর্ষেও ভর্তি হতে পারেননি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহমুদুল ইসলাম হাসিব বলেন, আমার দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল বের হয়নি। আমি তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারছি না। এ বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে আমি ছাত্রত্ব হারাবো। বিভাগ থেকে আমার খাতা সময়মতো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়নি। চার মাস পরে পাঠানো হয়েছে। তাই তারা আর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী হাবিব লেখাপড়া না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছেন।
চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভিএক্সের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, একটা ছেলে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার হয়েছিল। কিন্তু তার বিষয়ে দু’মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসার কথা থাকলেও এক বছরেও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তার বন্ধু-বান্ধব বিভাগে তালা লাগিয়েছে।
এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘এটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাজ। আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসে খাতা পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। এখানে আমাদের কোনো কাজ নেই।’
বিভাগের সভাপতি আসমা আক্তার বলেন, আমরা তাদের খাতা পাঠিয়ে দিয়েছি রেজিস্ট্রার অফিসে। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে চবির শৃঙ্খলা কমিটি। তবে তাদের জন্য কোনো সুপারিশ করা যায় কিনা তা বিভাগের একাডেমিক কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আমির মোহাম্মদ মুছা বলেন, গত বছর তাদের নকল ধরা হলেও বিভাগ আমাদের খাতা দিয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। তাছাড়া শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং না হওয়ায় কিছুদিন আগেও উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। মিটিং হলে সেখানে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এরকম নকল ধরা পড়লে শিক্ষার্থীদের সাধারণত এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দুই শিক্ষার্থীকে বলেছিলাম, তোমরা দ্বিতীয় বর্ষের সঙ্গে আবারও পরীক্ষা দাও। তারা কথা শোনেনি। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের দুইটা পরীক্ষা চলে গেছে। এখন তারা যদি এক বছরের জন্য এক্সপেল হয়, তাহলে দু’বছরের একাডেমিক গ্যাপে পড়ে যাবে। তবে বিভাগ যদি সুপারিশ করে শাস্তি কমানোর জন্য, তাহলে শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে তাদের বিষয়ে উপাচার্য বিবেচনা করতে পারেন।