ksrm-ads

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

চমেক দখলে নিতে চায় ‘দালাল চক্র’, বদল হয় হাসপাতাল!

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী আসেন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে। তবে প্রতিদিনকার সমাগমে ৫ শতাংশ রোগীর ভিড়ে লুকিয়ে রয়েছে কয়েকটি দালাল সিন্ডিকেট। এসব দালালরা প্রতিনিয়ত রোগী ও স্বজনদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ভাগিয়ে নেওয়া এবং অর্থের বিনিময়ে দ্রুত সেবা মিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন হাসপাতালে আগত সেবাপ্রার্থীদের।

দালাল চক্রে পুরুষ ও নারী সদস্য মিলেই মূলত একটি সিন্ডিকেট। নারী সদস্যরা খুব সহজেই হাতে নিতে পারেন রোগীদের। তবে এসব নারী সদস্যদের উৎপাত সবচেয়ে বেশি হাসপাতালের ভেতরে। তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন একাধিক রোগী। এমন তথ্যই উঠে এসেছে সেবা নিতে আসা রোগীদের বক্তব্যে।

এসব দালাল চক্রের সদস্যরা হাসপাতাল অনুযায়ী বেঁধে দেয় মূল্য ছাড়ের পরিমাণ। অতঃপর নেওয়া হয় সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে। ফলে সিন্ডিকেটের কাছেই জিম্মি হাসপাতালে আসা সকল রোগী। এমনকি তাদেরকে টাকা দিলেই সহজেই মিলয়ে দেন চিকিৎসা সেবা। এসব চক্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। যাদের সহযোগিতায় চালানো হচ্ছে দালালী কার্যক্রম।

তবে বহিরাগত রোগী ও স্বজনদের একাংশ দালালদের খপ্পরে পড়ছে। এক্ষেত্রে শুধু সাধারণ রোগীই নয়, মরণব্যাধি ক্যানসার, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়াসহ সব ধরনের রোগীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে হচ্ছেন প্রতারিত।হারাচ্ছেন অর্থকড়ি। অন্যদিকে হাসপাতালের একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে এসব অর্থ। যারা দালালদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।

চমেক’র বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা মিলে এক দালালের। পিছু হেঁটে কিছুদুর যেতেই দেখা যায় দালালদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। একসাথে মিলিত হয়ে করা হয় বুদ্ধি পরামর্শ। চক্রের সদস্যদের সাথে রয়েছে সার্বক্ষণিক মুঠোফোনে যোগাযোগ। সন্দেহজনক মনে হওয়ার পাশে গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করতেই দেয় ভোঁ দৌড়।

জরুরী বিভাগে আরেক দালালের সন্ধান পাওয়া যায়। নাম তার সুমন। দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় জরুরী বিভাগের সামনে। কিছুক্ষণ পর পর রোগীর সাথে কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তেমন সাড়াও মিলছে না। টার্গেট অনুযায়ী কিছুক্ষণ পর এক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন কী সমস্যা হয়েছে মানে রোগীর সমস্যা কি? উত্তর পাওয়ার সাথে সাথেই দেওয়া হলো অফার। বলতে শোনা যায় পাশের হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা মিলিয়ে দিব। এবং বিশ্বাস রাখতে পারেন কম খরচে মিলিয়ে দেব ভালো চিকিৎসা। কিন্তু এখানে দিনের পর দিন পড়ে থাকলেও ডাক্তার কবে পাবেন তার হিসেব আছে? এমনভাবে বিভিন্ন কলাকৌশলে অফার করে যাচ্ছেন সেই সেবাপ্রার্থীকে।

তবে সেই মহিলা সাড়া না দিয়ে চলে যান ভেতরে। পিছু নেয় প্রতিবেদক। জিজ্ঞাসা করা হয় ওই যুবক কী জানতে চাইলেন। নুর জাহান নামের সেই নারী বলেন, আমার রোগীকে অন্য হাসপাতালে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিবেন বলছে। তবে আমি তো উনাকে চিনিও না। কী সহযোগিতা নিব?

চমেকে আসা কহিনুর আক্তার নামের এক মহিলা জানান, আমি হাসপাতালে এসেছি তিনদিন হলো, আমার ভাগ্নি ভর্তি আছে। হাসপাতালে যেসব আয়া রয়েছে তারা বেশী ভয়ংকর। তাদের টাকা না দিলে কোন সেবা পাওয়া যায়না। এমনকি স্যালাইনের খোলস খুলতে বলা হলে ২০-৫০ টাকা দিলে তারপর খুলে দেয়। তাদের কাছে অসহায় আমরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় তলার বাউন্ডারিতে শুয়ে থাকা আরেক রোগীর অভিযোগ, গরীব মানুষ আমি টাকা কড়ি নেই। তাই চলাচলের রাস্তায় শুয়ে আছি৷ এখানে সেবা নিতে গেলে দালাল ধরতে হয়। চিকিৎসা পাওয়ার যে নিয়ম রয়েছে হাসপাতালে সেই নিয়ম অনুযায়ী তো চিকিৎসা পায়না। যদি টাকা-পয়সা থাকতো সব পাইতাম। না হলে প্রাইভেট হাসপাতালে যাইতাম। আমি এই জায়গায় দুইদিন, এভাবেই আছি। খাবার দাবারে কতো সমস্যা হচ্ছে কিন্তু বলার উপায় নেই। আর বাথরুমগুলোতে তো যাওয়ার মতো অবস্থাই নেই। আপনাকে এতোকিছু বলেও কী লাভ হবে। সমাধান করে দিবেন নাকি? গরীবের দুঃখ কিছুতেই যায় না। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই রোগী।

অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা বিভিন্ন সময় টাকা দাবী করেন। সিঁড়ি দিয়ে প্রবেশের সময় টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ স্বজন ও রোগীদের। এমনকি তাদের অবজ্ঞা করারও সুযোগ থাকেনা, কথার বিপরীত হলেই চালানো হয় হাতের লাঠি দিয়ে অত্যাচার। এছাড়াও আনসার সদস্যের লাঠির আঘাতে রোগী ও স্বজনদের মাথা ফাটাফাটিসহ শিশু নির্যাতন এবং গাড়ি ভাংচুরেরও অভিযোগ উঠে বিভিন্ন সময়। কিন্তু অজানা কারণে থামে না আনসার সদস্যদের দৌরাত্ম্য।

এছাড়াও এর আগে ৬ নভেম্বর হাসপাতালের মর্গের দুই কর্মচারীর মধ্যে মারামারির ঘটনায় মো. ইলিয়াস (৪৭) নামের এক কর্মচারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

একের পর এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা, দালালের দৌরাত্ম, আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগসহ নানান অরাজকতা তৈরী হলেও অজানা কারণে কোন কিছুই থামাতে পারেনা কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি দালাল চক্রের বিশাল এক সিন্ডিকেটকে কব্জায় নিতে সক্ষম হয় চমেকের পুলিশ ফাঁড়ি। গ্রেফতার করা হয় নারী-পুরুষসহ দালাল চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যদের।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) থেকে দু’য়েক মাসে ডজনখানেক দালাল ধরা পড়ে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির হাতে। তবে পুরুষ দালালের চেয়ে নারী দালাল মিলছে বেশিরভাগ। যাদের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হাসপাতাল প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, বেড়ে গেছে আপনি কিসের জন্য বলছেন? ধরা পড়ছে বলেই বেড়ে গেছে! হ্যাঁ সমস্যা টা এখানেই আপনাদের, দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু বদলান অন্য দৃষ্টিতে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন। দালাল ধরা মানেই দালাল বেড়ে যাওয়া না। দালাল আগেও ছিলো আগেও ধরা পড়ছে। এখন ওরা মহিলা দালাল এমপ্লয় করছে, এখন মহিলা দালাল বেশি ধরা পড়ছে এই।

এছাড়াও আগে পুরুষ দালাল ধরা পড়েছে আর এখন নতুন করে মহিলা দালাল ধরা পড়ছে। তারমানে এই না উৎপাত বেড়ে গেছে, উৎপাত আগে যা ছিলো তার চেয়ে ৮০ ভাগ কমে গেছে। এই ২০ ভাগ আমরা কখনো কমাতে পারবো না। আসলে খুবই কঠিন এবং এই হলো আসল কথা।

 

আরও পড়ুন