চট্টগ্রাম নগরীর কাপাসগোলায় বৃষ্টির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা খালে পড়ে গেলে নিখোঁজ হয় ছয় মাস বয়সী শিশু সেহেরিশ। রাতভর খোঁজাখুঁজির পর পরদিন সকালে তার নিথর দেহ পাওয়া যায় ৫ কিলোমিটার দূরে, আছাদগঞ্জের শুঁটকিপট্টির একটি খালে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে মা সালমা বেগম ও দাদি আয়েশার সঙ্গে সেহেরিশ কাপাসগোলার ফুফুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। সিএনজি থেকে নেমে গলির ভেতর ওঠেন ব্যাটারিচালিত রিকশায়। পথিমধ্যে নবাব হোটেল সংলগ্ন হিজড়া খালের কাছে পৌঁছালে রিকশাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়।
স্থানীয়দের সহায়তায় মা ও দাদিকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সেহেরিশ তলিয়ে যায় খালের হাঁটু পানিতে। রাতভর উদ্ধার প্রচেষ্টা চললেও ব্যর্থ হয় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন। অবশেষে শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে শুঁটকিপট্টির খালে তার নিথর দেহ ভেসে ওঠে।

ঘটনার পর আছাদগঞ্জের শুঁটকিপট্টিতে ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। পুরো এলাকায় নেমে আসে নীরবতা। শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয় শুঁটকিপট্টি জামে মসজিদে যোহরের নামাজের পর। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সরেজমিনে এসে বলেন, “এ ধরনের বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। খালের পাশে নিরাপত্তা ব্যারিয়ার স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কারণে কিছু এলাকায় তা এখনো খোলা রাখা হয়েছে।”
চার বছরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন
চট্টগ্রামের অরক্ষিত খাল ও নালায় পড়ে মৃত্যুর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত চার বছরে বর্ষার সময় অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে শিশুসহ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
২০২১ সালের আগস্টে মুরাদপুরে খালে পড়ে নিখোঁজ হন সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ।একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আগ্রাবাদে হাঁটার সময় খালে পড়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। ২০২২ সালে ষোলশহর এলাকায় পড়ে নিখোঁজ হয় শিশু কামাল। ২০২৩ সালের আগস্টে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে মারা যায় দেড় বছরের শিশু ইয়াছিন। ২০২৪ সালের জুনে গোসাইলডাঙ্গায় পড়ে নিখোঁজ হয় সাত বছরের শিশু সাদিউল ইসলাম। এবার ২০২৫ সালে শহরের আরেক খালে হারিয়ে গেল ছয় মাসের সেহেরিশ। মায়ের চোখের সামনেই ঘটে গেল চট্টগ্রামবাসীর হৃদয় বিদারক এ ঘটনা।
নগরবাসীর প্রশ্ন, আর কত প্রাণ গেলে বদলাবে বাস্তবতা?
নগরবাসীর কণ্ঠে এখন একটাই প্রশ্ন কখন নিরাপদ হবে আমাদের পথঘাট ও খালপাড়? প্রশাসনের আশ্বাসে কি সত্যিই ঘটবে কোনো পরিবর্তন? নাকি সামনে আরও এক সেহেরিশ, এক কামাল, এক সাদিয়ার হারিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা?