চট্টগ্রামে আইনজীবী, পুলিশ ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগের পৃথক দুই মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভাশিস শর্মাসহ ৬৫ জন আইনজীবীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার আদালত শুনানি শেষে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।
সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রিয়াদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগের পৃথক দুই মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অ্যাডভোকেট শুভাশিস শর্মাসহ ৬৫ জন আইনজীবীর জামিন আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাঁদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, আইনজীবীদের জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শুভ্রজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। আজকের মামলাটি মূলত তার বড় ভাইয়ের করা ভাঙচুর এবং বিস্ফোরক আইনের মামলা। এখানে ৬৩ জন আইনজীবীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। যিনি মামলা করেছেন তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া যে আলামত দেওয়ার কথা ছিল; তার কিছুই দিতে পারেননি তিনি। বিজ্ঞ আদালত আমাদের শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে এই মামলার চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত ৬৩ জন আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন।’
সরেজমিনে দেখা যায়, আদালতে প্রবেশের দুটি পথেই চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি ছাড়া অন্যান্য যানবাহন আসা-যাওয়ায় কড়াকড়ি করা হয়েছে। এছাড়া সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে এজলাস পর্যন্ত দুপাশ ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং সেনাসদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘আজ আদালতে ৬৩ জন আইনজীবীর আত্মসমর্পণের একটি বিষয় ছিল। এর প্রেক্ষিতে আমরা আদালত প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে।’
এদিকে, আদেশের পরপরই আইনজীবীদের একাংশ আদালত চত্বরে এসে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর, ইসকনের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, আলিফ ভাই কবরে খুনি কেন বাইরে’—এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা আসামি আইনজীবীদের জামিন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিক্ষোভ করতে থাকেন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলামের ভাই জানে আলম বাদী হয়ে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন। এর মধ্যে ৭০ জন আইনজীবী রয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার আরেক মামলায় কিছু আইনজীবীকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় আসামিরা আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা চালান। হামলায় ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একইভাবে পুলিশের করা মামলায় তাঁদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়।