২ জুলাই ২০২৫

মিরসরাইয়ের রাজনীতি

ছবি কথা বলে, হাসিতে ‘আগুন জ্বলে’

একটি ছবি অনেক কথাই বলে। অনেক অর্থ বহন করে। ছবি কথা বলে সুখ, দুঃখ, হাসি ও কান্নার। বলে জীবনের পাওয়া না পাওয়ার কষ্টের কথা। সেই সঙ্গে বলে অনাগত ভবিষ্যতের কথাও। হোক সে কথাগুলো দৃশ্যমান বা কল্পনার। এমনি একটি ছবি কথা বলছে মিরসরাই রাজনীতি অঙ্গণে। যে ছবির দৃশ্য বাস্তবে দেখার কথা কেউ ভাবতেও পারেনি, কিন্তু, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন দৃশ্যই দেখা গেল আজ (সোমবার)।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের একসাথে বসে হাসির দৃশ্যের একটি ছবি বলছে নানা কথা। এ দুই নেতার মধ্যে প্রকাশ্য রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কথা থাকলেও এ নিয়ে মিরসরাই আওয়ামী লীগে এবার অন্যরকম আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে নানা কৌতুহল।

সোমবার (২০ মে) দুপুরে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট তাঁর ফেসবুক পেইজে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তাঁর বৈঠকের হাস্যোজ্জ্বল ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আজ প্রিয় অভিভাবকের সান্নিধ্যে’। এতে করে মিরসরাই আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের মাঝে একদিকে আনন্দ উল্লাস দেখা দিয়েছে। এটিকে রাজনৈতিক সৌন্দর্য হিসেবে দেখাছেন অনেকে, আর কেউ জানাচ্ছেন অভিনন্দন। অন্যদিকে এমন দৃশ্যে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মাঝে। ওই পোস্টের কমেন্টে জ্বলছে কথার আগুন, যেন এই দুই নেতার হাসিতে আগুন জ্বলছে রাজনীতি অঙ্গণে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসায় নিয়াজ মোর্শেদ এলিট পাশাপাশি বসে আলাপকালে দুইজনই হাসছেন। অনেকের প্রশ্ন- এটি কেমনে সম্ভব? এতদিন সাধারণ কর্মীদের কেন বলিরপাঠা বানালেন? কেউ বলছেন, এটা দেখার পর নিজের চোখটারেও বেঈমান মনে হচ্ছে, আবার কেউ দু’জনের এই হাসিকে বলছেন, ‘মিথ্যা হাসি’।

মিরসরাই উপজেলার ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আনোয়ার বাপ্পি দুই নেতার এই হাসিকে ‘মিথ্যা হাসি’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। এমন ছবি ও স্ট্যাটাস দেখে কাজী নিরব সংশয় প্রকাশ করে করেন, ‘ভাই আপনার (এলিট) আইডি হ্যাক হয়ে গেছে?’

সৈয়দ মহিউদ্দিন নামে একজন আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘সাধারণ কর্মীরা গ্রুপিং করে কারো হাত নাই, কারো পা নাই, কেউ বছরকে বছর মামলা নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে, আর আপনারা সুশীল সমাজ একটা সময় এক চেয়ারে বসে চা কফি খান। খুবই দুঃখজনক। এর শেষ কোথায় আমাদের বলার ক্ষমতা নেই, দিন শেষে ত্যাগী কর্মীরাই সকল দুঃখ কষ্ট সইতে হয়।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ইফতেখার আহমেদ রুশো লিখেছেন, ‘মাইর খাবো আমরা, ঘর বাড়ি ভাঙবে আমাদের আর নেতারা সমাঝোতা করে অট্টহাসি দিবে। এইটাই বুঝি রাজনীতি?’ দূরন্ত মামুন নামে একজন বলেন, ‘আগেরবার যারা দুজনের হাসির রেকর্ড শুনছেন, এইবার তাদের জন্য হাসির ফটোসেশানটা। সামনে ভিডিও দেখার অপেক্ষায় আমরা আমজনতা।’

শেবলু নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছুই নেই আসলে, কর্মীরা দিশেহারা।’ তারেক পারভেজ লিখেছেন, ‘কর্মীরা যে একে অন্যের সাথে মারামারি কর, এবার বুজো ঠেলা। উপরে উপরে তারা ঠিক।’

শুভকামনা জানিয়ে ইমরান হক নামে একজন লিখেছেন, ‘আদর্শ রাজনীতি বলতে যা বোঝায় তা এক ধরনের বন্ধ্যা, না আন্ডা দেয়, না বাচ্চা, না ফুল ফুটে, না ফল দেয়। এখনকার রাজনীতি হলো একটি সিজনাল ব্যবসা যেখানে নীতি আদর্শের বালাই থাকে না। শুভকামনা মিরসরাইয়ের জনগণের জন্য।’ একই সুরে কামরুল হোসাইন লিখেন, ‘তিনি (মোশাররফ) এমন একজন মানুষ রাজনীতি করতে হলে ওনার দরবাবে যেতে হবে… আমরা চাই আপনারা সবাই এক সাথে থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরো শক্তিশালী করবেন, শুভ কামনা রইল আপনাদের জন্য।’

সাংবাদিক আকাশ ইকবাল লিখেছেন, ‘অবশেষে তাঁরা একান্তে বসেছেন! এবারের হাওয়ায় মিরসরাইয়ের রাজনীতি কোন দিকে যায় এবার দেখবেন। আমি আগেই বলেছিলাম, নিয়াজ মোর্শেদ এলিট রাজনীতির মাঠে আঠঘাট বেঁধেই নেমেছেন। তিনি বানের জলে ভেসে চলে যাওয়ার কচুরিপানা নয়।’

‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। অনেকে তাঁকে জাদুঘর বলেন। তবে, একটা ভবিষ্যদ্বানী দিচ্ছি, এটা এই জাদুঘরের শেষ খেলা। আর এই খেলায় তিনি শোচনীয়ভাবে হারবেন। উল্লেখ্য, নিজের প্রয়োজনে গিয়াস উদ্দিনকে তৈরি করেছিলেন, পরে গিয়াসকে ভেটো দিতে এনেছিলেন শেখ আতাউরকে, এরপর জসিম উদ্দিন, জাহাঙ্গিরসহ অনেকে এসেছেন। সবাইকে নিজের ইচ্ছা মতো নাচিয়েছেন। তাই এবার নিজের মতো নাচাতে পারবেন না বরং উনি নিজেই নাচবেন…।’

স্বপ্নীল মেহেদী লিখেন, ‘এটা দেখার পর নিজের চোখটারেও বেঈমান মনে হচ্ছে, কয়েকবার পানি দিয়ে ধুইলাম, টিসু দিয়ে মুছলাম। তাও সব ঝাপসা। নাহ ঠিকাছে… এটাই তো রাজ (নেতি)।’ তিনি আরও লিখেন, ‘তরুণ ছাত্র নেতারা এটা থেকে শিক্ষা নাও, হয় মাল কামাও নয়তো বাল (চুল) কামাও। দেখতে ডন ডন একটা ভাব আসবে। মনে সাহস রেখে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করো, নিজের অবস্থান তৈরি করো, বড় বড় নেতারাও তোমাকে ডেকে নিবে, এর ব্যতিক্রম হলে আপন বাপও তোমারে পাছায় লাথি মেরে ইগনোর করবে…।’

‘বর্তমান রাজনীতি নীতি আদর্শ দেখে না, টাকা থাকলে ভিতর থেকে কনফিডেন্স আসবে। আর কনফিডেন্স সাহস কয়েকগুণ বাড়িয়ে ক্ষমতা এনে দিবে…। ক্ষমতা থাকলে মুরিদের অভাব হয় না, সকাল সন্ধ্যায় পুজা দিবে।’

এস.এম. আবদুল্লাহ্ আল জাবেদ নামে একজন কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘রাজনীতি এখন নাট্য মঞ্চতে পরিণত হলো। কর্মীরা কিন্তু সাবধানে চলবেন।’

এম সালাম প্রশ্ন তুলেন, ‘বিষয়টা রাজনৈতিক সৌন্দর্য কিন্তু এতদিন সাধারণ কর্মীদের কেন বলিরপাঠা বানালেন? সে প্রশ্নের উত্তর কি কখনো অত্যাচারিত নিপিড়ীত কর্মীদেরকে দিতে পারবেন?’

নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের রাজনীতি নিয়ে মোহাম্মদ তারেক নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘গ্রুপিং করবেন আপনারা- মাইর খাবে, মামলা খাবে, ঘর বাড়ি ছাড়বে কর্মীরা, কি দারুণ রাজনীতি এলিটদের।’

সাকিব মির্জা নামে একজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘সবকিছু শেষে আমরা মামলার আসামি, আমরা হামলার শিকার, আমরা পদ পদবি থেকে বঞ্চিত। কর্মীদের হামলা মামলার কি হবে? আমাদের রক্তের কোন দাম নেই? আমাদের জীবনের কোন মুল্য নেই?’ হোসাইন মামুনের ক্ষোভ, ‘ভূতের মুখে রাম, রাম,। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অভিভাবকের বিপক্ষে ছিলেন আর এখন অভিবাবকের সাথে সেলফি, হাসি, ঠাট্টা, আসলে এই দুনিয়ায় মানুষ চিনা বড় দায়, যাই হউক শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

লিটন নামে আরেকজন পরকালে তাদের দু’জনের বিচার চেয়েছেন। লিখেন, ‘এই সওদাগর অনেক ত্যাগী, পরিশ্রমী আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। দুনিয়াতে এদের বিচার না হলেও পরকালে এদের জন্য ‘হুতামা’ আগুন প্রস্তুত আছে, যা অন্তর পর্যন্ত জ্বালিয়ে ছারখার করবে।’

ওমর ফারুক জিসান নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘দাবা খেলার শেষে কিন্তু রাজা এবং সৈন্য এক বক্সে থাকে’। এলিটকে উদ্দেশ্য করে খাজা মইন উদ্দীন নামে একজন লিখেছেন, ‘উনি আপনার অভিভাবক ছিলেন আজকে জানতে পারলাম’। রাজু খান লিখেছেন, ‘মীর জাফর মারা গেছেন, ওনার ওয়ারিশ তো মারা যায় নি, এখন প্রমাণিত।’

আরও পড়ুন