বাংলাধারা ডেস্ক »
বাংলাদেশে আশংকাজনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারাদেশে ৪৯৬টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ)। ১৫টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্প্রতি ‘শিশু অধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক এ উপাত্ত প্রকাশ করে সংস্থাটি।
অন্যদিকে, একই সময়ে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ৩৯৯টি শিশু। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮টি সংবাদ বিশ্নেষণ করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এ তথ্য তুলে ধরেছে।
শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুছ সহীদ মাহমুদ, আগে শিশুরা শুধু ধর্ষণের শিকার হতো। এখন ধর্ষণের পর মেরেও ফেলা হচ্ছে। এটা হিংস্রতা ও বর্বরতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে শিশুদের রক্ষায় প্রচলিত আইনে সংশোধন আনার কথা বলেন তিনি। যে ধরনের শিশু নির্যাতন হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে রায় কার্যকরের সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
এমজেএফের প্রতিবেদন : গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জানায়, গত ছয় মাসে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হওয়া ৩৯৯ শিশুর মধ্যে ছেলেশিশু ছিল আটটি। ধর্ষণ-পরবর্তী সময়ে এক ছেলেশিশুসহ মারা গেছে ১৬ শিশু। তাদের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ৩৯৯ শিশুর মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল ৪৪ শিশুর ওপর।
এ ছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৪৯ শিশু। যৌন হয়রানির ঘটনায় আহত হয়েছে ৪৭ মেয়েশিশু ও দুই ছেলেশিশু। এর আগে ২০১৮ সালে ৩৫৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে মারা গিয়েছিল ২২ জন এবং আহত হয়েছিল ৩৩৪ জন।
সম্প্রতি দেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বিচারহীনতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অসহনীয় অবস্থায় উপনীত হয়েছে। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তিনি সবাইকে পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করে এই ধর্ষণ প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা, স্কুল-কলেজ এবং পাড়ার তরুণদের সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে।’
বিএসএএফের প্রতিবেদন : ছয় মাসে ৪৯৬ শিশু ধর্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণ হয়েছে ৫৩টি। ২৭ প্রতিবন্ধী শিশুও ধর্ষিত হয়েছে। আর ধর্ষণের পর ২৩ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। মোট শিশু হত্যা হয়েছে ২০৫ জন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১২০ শিশু। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে সর্বাধিক এপ্রিল মাসে ১২২টি শিশু ধর্ষিত হয়। জুন মাসে হয় ১১৯টি। ছয় মাসে শিশু হত্যার চেষ্টা হয়েছে ২৮টি।
৯৩টি আত্মহত্যার ঘটনা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০টি। চুরি হয়েছে ১২০ শিশু। হারিয়ে গেছে ৭২ শিশু। এর মধ্যে ২৪ জনকে মৃত ও ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অপরিচিত নবজাতক শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে ১৬টি। অপরিচিত নবজাতক পাওয়া গেছে ১২টি। ২৮৬ শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩৫, চিকিৎসার অবহেলায় ১১, বর্বর পিতামাতার হাতে ১৮ এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫৪ জন।
এ ছাড়া এসিড সহিংসতার শিকার ২, বাল্যবিয়ের শিকার ৮ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আহত হয়েছে ২৭ শিশু। গত ছয় মাসে ৯টি শিশু হত্যা, আটটি ধর্ষণ ও চারটি যৌন হয়রানি মামলার রায় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর