চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘি ময়দানে জব্বারের বলি খেলা ও বৈশাখী মেলার ১১৫তম আসর শুরু হচ্ছে আগামীকাল ২৪ এপ্রিল। ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে মূল বলী খেলা। প্রতিবছর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে লালদিঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এ কুস্তি প্রতিযোগিতা। এবারের বলীখেলার পৃষ্ঠপোষক এনএইচটি হোল্ডিং লিমিটেড। খেলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল থেকে বৈশাখী মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও লালদীঘির মাঠ ঘিরে ইতোমধ্যেই জমে উঠছে বৈশাখী মেলা।
সরেজমিন দেখা গেছে, লালদীঘির পেট্রল পাম্প, জেলা পরিষদ মার্কেট চত্বর, সিনেমা প্যালেস থেকে হাজারী গলির মুখ পর্যন্ত মাটির তৈজসপত্র, শোপিস, ফুলদানি, হাতি-ঘোড়া, মাটির ব্যাংকের বড় বড় স্তূপ। আনুষ্ঠানিক মেলা শুরুর বেশ কয়েক দিন আগেই ঢাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ট্রাকে পণ্য নিয়ে এসেছেন। বেচা-কেনাও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে।
হৃদয়কাড়া মৃৎশিল্প, কুটির শিল্প, গ্রামীণ নানা পণ্যসামগ্রী দেখেই সেসব কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। গৃহস্থ পরিবারগুলো বছরের টুকিটাকি কেনাকাটা শুরু করেছেন জব্বারের বলীখেলার বৈশাখী মেলা থেকে। কাচ, পাট, সুতো, বাঁশ, বেত, কচুরিপানা, কাঠসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি আকর্ষণীয় সব বাতি, শোপিস, আয়না, খেলনার দোকানগুলোতে দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের ভিড়।
দেশজুড়ের তীব্র গরম পড়ায় মাটির তৈরি পানির পাত্র, কলসি, জগ, গ্লাসের চাহিদা বেশি। চাহিদা রয়েছে মাটির ব্যাংক, পুতুল, মূর্তি ও শোপিসের। মাটির এসব তৈজসপত্র নিয়ে মৃৎশিল্পীরা এসেছেন সাভার, গাজীপুর ও ঢাকা থেকে। দেশি শৌখিন ক্রেতাদের পাশাপাশি এসব তৈজসপত্রের কিনতে আগ্রহী বিদেশি ক্রেতারাও।
তালপাতা, বেত, বাঁশ, কাপড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের হাতপাখা এবং ফুল ঝাড়ুর ব্যাপক কদর রয়েছে এ মেলায়। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চন্দনাইশের একরঙা হাতপাখা। প্রতি জোড়া ভালো মানের হাতপাখার দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০০ টাকা। বিভিন্ন মানের ফুলঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে প্রতিজোড়া ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত।
গরমে স্বস্তিদায়ক আরেকটি পণ্য শীতলপাটি। যেটি কিনতে সোনালী ব্যাংকের সামনে ভিড় করছেন আগ্রহী ক্রেতারা। শীতলপাটির সাথে পাল্লা দিচ্ছে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের মাদুরও।
এছাড়াও কাঠের খাট, ওয়ারড্রোব, বেতের তৈরি আসবাবপত্র, বৈচিত্র্যময় গৃহস্থালিসামগ্রী, শাড়ি, থ্রিপিস, ছোটদের কাপড়, মুড়ি মুড়কি, গহনা, খেলনা, টমটম গাড়ি, বেলুন, বাঁশি, মৌসুমি ফলসহ রকমারি পণ্য ও খাবার বিক্রি হচ্ছে পুরো মেলাজুড়ে।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বলীখেলা আয়োজক কমিটির সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলীখেলা এবং বৈশাখী মেলা নিরাপদ করতে পুরো এলাকা শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা, মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেউ চাঁদা চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা চলাকালীন ক্রেতা–বিক্রেতা সহ আগত লোকজনের সমাগমের কারণে লালদীঘি মাঠ সংলগ্ন আন্দরকিল্লা মোড় (জামে মসজিদের সামনে), পুরাতন টেলিগ্রাফ রোড, বোস ব্রাদার্স মোড় (পুলিশ প্লাজার সামনে), রাইফেল ক্লাব, কোতোয়ালী মোড় (সিডিএ গেইট), আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ এবং টেরিবাজার ফুলের দোকান (তিন রাস্তার মুখ)-এ রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ওই সময়ে লালদীঘি অভিমুখে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক আমদানি–রপ্তানি সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে পণ্যবাহী ট্রাক–কাভার্ডভ্যান সহ অন্যান্য যানবাহন কোতোয়ালী মোড় হয়ে ফিরিঙ্গীবাজার মেরিন ড্রাইভ রোড ব্যবহার করে চাক্তাই ও রাজখালী হয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে যাতায়াত করবে। লালদীঘি মাঠে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে বৈশাখী মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য এই নির্দেশনা অনুসরণের জন্য সকল যানবাহন চালক ও যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান চলাকালীন এই এলাকার সড়কগুলো এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের জন্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর ১৯০৯ সালে লালদীঘির পাড়ের বলীখেলার সূচনা করেন। প্রতিবছর ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) বলীখেলাকে (কুস্তি প্রতিযোগিতা) ঘিরে তিন দিনের বৈশাখী মেলা বসে।
বাংলাধারা/আজমল