ksrm-ads

২২ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

জব্বারের মেলা যেন চিরায়িত বৈশাখ

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবিতায় যেমন বৈশাখের আগমন উপলক্ষে নানা পংক্তি বাঙালিদের জন্য লেখা হয়েছিল এরই একটি অংশ হিসেবে জব্বারের বলী খেলায় মেলার বিষয়টিও সেই গ্রাম্য পল্লী থেকে শহরে বিদ্যমান রয়েছে। বাঙালির ঐতিহ্য শহুরে সংস্কৃতি থেকে উঠে আসেনি। গ্রাম বাংলা থেকেই বৈশাখী মেলার আয়োজন শুরু হয়েছে। গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপসী সংস্কৃতির উল্লেযোগ্য দিক ফুটিয়ে তুলতে সেই শতবর্ষ আগ থেকেই চলে আসছে ঐতিহ্যের অবয়বে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অজপাড়া গাঁয়ে যেমন মেলার আয়োজন করা হয় সেই মেলা চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষেও জমে উঠে। শততম পার হয়ে করোনা কালীন খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়া সহ দু’বছর নিয়ে ১৩ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে এবারের আয়োজনকে ঘিরে। মেলার সর্ববৃহৎ আকর্ষণ হচ্ছে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে চট্টগ্রামের রেওয়াজ হিসেবে তথা ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে জব্বারের বলী খেলা। উল্লেখ্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার ১৯০৯ সালে সর্বপ্রথম এ মেলার আয়োজন করেন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে।

চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের ১১৩তম বলী খেলা আগামী ২৫ এপ্রিল। এ খেলাকে ঘিরে চট্টগ্রামে তিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানের আশপাশ এলাকায়। দেশের অজপাড়া গাঁয়ে তৈরি হস্তশিল্পের বিশাল সমাহার হবে এ মেলায়। আগামী ২৩ এপ্রিল সেই কাঙ্খিত মেলার শুভলগ্ন শুরু হবে যা চলবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা নিয়ে আজকালের মধ্যে হাজির হবে।

মেলার আয়োজনকে ঘিরে তিনদিন ধরে নগরীর নন্দনকানন থেকে শুরু করে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত অনেকটা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাবে রাস্তার দুধার। অতীতের ইতিহাস অনুযায়ী, লালদীঘি মাঠেই জব্বারের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবার কথা কিন্তু লালদীঘির মাঠে ৬দফা মঞ্চ নির্মিতব্য অবস্থায় থাকায় তা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পার্শ্ববর্তী রাস্তার ত্রীমুখী মোড়েই অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বালি দিয়ে গড়ে তোলা হবে মাটি থেকে প্রায় ৪/৫ফুট উঁচু মঞ্চ। এতেই লড়বে দেশের বরেণ্য অঞ্চল ছুটে আসা বলীয়ানরা।

সাধারণ বাউট ও চ্যাম্পিয়ন বাউটে ১শরও বেশি প্রতিযোগী গত দুই যুগ ধরে লড়ে আসছে। গত কয়েক বছর ধরে কক্সবাজারের দিদার বলী আর কুমিল্লার আলী লড়ে আসছে। এর আগে খাগড়ছড়ির মর্ম সিং ত্রিপুরা গত ৫/৬ বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ পদক নিজেদের মধ্যে অনেকটা পালাবদলের মত ধরে রাখলেও ২০১২ সালে ১০২তম আয়োজনে রেফারির বিরক্তির কারণে নক আউট হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ২০ মিনিটেও বেশি সময় এ দুই প্রতিযোগী একে অপরকে কুস্তিতে হারাতে না পারায় শেষতক প্রধান অতিথির সিদ্ধান্তক্রমে এ দুজনের প্রতিযোগিতা বাতিল করে দেয়া হয়। পরে নবাগত দুজনের মধ্য দিয়ে এ খেলা চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ নির্ধারণ শেষ হয়।

এদিকে, তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলাকে ঘিরে দেশের উত্তরাঞ্চল ছাড়াও নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, মীরসরাই, সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি থেকেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ী নগরীতে আসতে শুরু করেছেন। কেউ খাবারের পসরা নিয়ে আবার কেউবা বসেবেন ঘটিবাটি আর রান্না ঘরের তৈজসপত্র নিয়ে। শিশুদের নজর কাড়তে বিচিত্র রকমের খেলনার চালান কুমিল্লা ও নোয়াখালি থেকে আসে। কাঠ ও বাঁশের তৈরি তৈজসপত্রের সরবরাহ নিয়ে তিন পার্বত্য অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন আদিবাসিরা। এদিকে, খাট পালং আলনা আর সেগুন কাঠের আসবাবপত্র রং বিহীন অবস্থায় রাঙ্গামাটি থেকে কয়েক ব্যবসায়ী যোগ দিয়ে থাকেন এ মেলাকে ঘিরে। শহুরে ফার্নিচারের নক্সীর ছোঁয়া বা ডিজাইন পার্বত্য অঞ্চলের কারিগরদের মাঝে পুরোপুরি অর্জন নেই। তবুও গত বছরগুলোতে চেষ্টার কমতি ছিল না পরিস্ফূটনে। এবারের সরবরাহে অনেকটা কৌশলী নকশার আর্বিভাব ঘটানো হবে এমন আশাবাদী আয়োজকরা।

এদিকে, মৃৎ শিল্পের ফুলদানি, ছাইদানি, টেবিল বা ড্রয়িং রুমে আলোকসজ্জার ছাউনিসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র স্থান পাবে এ মেলায়। মনের মাধুরি মেশানো রংয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে মৃৎ শিল্পে গড়া রূপসী সমাহারে। চোখ ধাঁধাঁনো নানা আইটেম দেখে আগেভাগে আসা ক্রেতাদের মাঝে গভীর আগ্রহ যেমন প্রকাশ পায় তেমনি মেলা শুরুর আগেই বিক্রির অর্ডার দেন নগরীর বিভিন্ন শপিং মলে থাকা দোকানীরা। এছাড়াও গৃহসজ্জার জন্য ছুটে আসে তরুণী ও গৃহিনীরা।

আরও পড়ুন