পুলিশ সদর দপ্তরের নকশা অনুযায়ী মাত্র সাড়ে তিন কাঠা জমির অভাবে দীর্ঘ ১০ বছর আটকে রয়েছে কর্ণফুলী থানা ভবন নির্মাণ। যদিও কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ থেকে কর্ণফুলী থানার জন্য ১৫ দশমিক ১১ কাঠা জমি কিনেছিল সিএমপি। জমি বরাদ্দ পেলেও নকশা নিয়ে জটিলতায় থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণ পিছিয়ে গেছে। এমনকি ২৪ বছর আগে কর্ণফুলীতে থানা কার্যক্রম শুরু হলেও (২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত) নকশা অনুযায়ী জমি পূরণ না হওয়ায় ভাড়া রুমে চলছে থানা কার্যক্রম।
তথ্য বলছে, ২০০০ সালের ২৭ মে থেকে চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদ এর পুরাতন ভবনে চলছে থানা কার্যক্রম। পরিষদের জরাজীর্ণ-ভবনের কিছু অংশের মাসিক ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে আজ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে।
অথচ কর্ণফুলী থানা কাম-ব্যারাক নির্মাণের জন্য মইজ্জ্যারটেক সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় ১৫ দশমিক ১১ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ জুন জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকমূলে ১৫ কাঠা জমি কিনে নেয় সিএমপি। এর বিপরীতে জমির মালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে প্রায় এক কোটি টাকা পরিশোধ করেন।
পরবর্তীতে আরো দশমিক ১১ কাঠা জমি সিডিএ থেকে কেনা হয়। কিন্তু পুলিশ সদর দফতর থেকে ৮তলা বিশিষ্ট কর্ণফুলী থানা ভবন নির্মাণের জন্য যে নকশা পাঠানো হয়েছে, সেই নকশায় সিডিএ থেকে কেনা জায়গায় সম্পূর্ণ ভবন নির্মাণ করা হবে না।
এতে নকশা অনুযায়ী আরো সাড়ে তিন কাঠা জমি প্রয়োজন। অথবা যতটুকু জমি বরাদ্দ নিয়েছেন ততটুকু জমিতে নতুন নকশার অনুমোদন দরকার। এ জটিলতায় পুনরায় জমি কেনা হচ্ছে না কেন সেটাও বড় প্রশ্ন সেবাপ্রার্থীদের।
বলা যায়, দীর্ঘদিন সিএমপি কর্ণফুলী থানা পুলিশ তাঁদের নিজস্ব আবাসন ও দাপ্তরিক অফিস সঙ্কটে ভুগছেন। যদিও কর্ণফুলী থানার পরিধি বেড়েছে। সেবা বেড়েছে কিন্তু সুযোগ সুবিধা বাড়েনি।
সিএমপির অন্য থানা থেকে কর্ণফুলী থানা আবার অপরাধ দমনেও পিছিয়ে নেই। যদিও স্বল্প জনবল দ্বারা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও নেই কোন পুলিশ ব্যারাক ও একত্রীভবন।
জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলা ও আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, রায়পুর, বারশত ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে কর্ণফুলী থানা প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। এখানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কাফকো, সিইউএফএল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল-কেপিইজেড ছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তীরে শতাধিক বড় মাঝারি শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
কর্ণফুলী থানার অধীনে তিনটি ফাঁড়ি-শাহমীরপুর, শিকলবাহা ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এবং তিনটি ক্যাম্প- কাফকো, কেপিইজেড ও শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুলিশ ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে। এ রয়েছে একটি পুলিশ বক্সও। থানায় বর্তমানে দু’জন পরিদর্শক, ২১ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ২ জন পিএসআই, ১৯ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও ২২ জন কনস্টেবল কর্মরত আছেন।
পুলিশ সদস্যরা জানান, অস্থায়ী থানা ভবন গ্রামের ভিতরে হওয়ায় ঘটনাস্থলে আসা যাওয়া করতে অসুবিধা হয়। একইভাবে থানায় সেবা নিতে আসা লোকজনকেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। অস্থায়ী ব্যারাকে পুলিশ সদস্যদের থাকার জায়গার সংকুলান হয় না। যাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কষ্ট হলেও নিরুপায় হয়ে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন; আশা করি শিগগিরই কর্ণফুলী থানার নিজস্ব কাম-ব্যারাক ও ভবন বরাদ্দ পাওয়া জমিতে নির্মাণ হবে।’
প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী চট্টগ্রাম জেলার একটি মেট্রোপলিটন থানা। এটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন। এখানে রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের স্কুল, কলেজ ও ইজারা ঘাট।
২০১৬ সালের ৯ মে পটিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নকে আলাদা করে কর্ণফুলী উপজেলার উন্নীত করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছিল প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)। যা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে বন্দর, পটিয়া ও আনোয়ারা থানা ভেঙে গঠিত হয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হলো কর্ণফুলী থানা।
১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তখন ৬০ বর্গমাইল এলাকায় দশ লাখ নগরবাসীর জন্য থানা সংখ্যা ছিলো ছয়টি। কার্যক্রম শুরু’র কয়েক বছরের মধ্যে স্বতন্ত্র বিধিমালা প্রণয়ন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে পড়ে সিএমপি।