কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের খুরুশকুলের তেতৈয়া রফিকের ঘোনায় রাতারাতি মুজিবনগর আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে জমি দখল চেষ্টার প্রতিবাদ করায় জজ’র পরিবারকে অগ্নিসংযোগ-মাদক-অস্ত্র-নারী মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে শনিবার (২৪ এপ্রিল) গভীর রাতে গোপন বৈঠক করে দখলদাররা এসব পরিকল্পনা করে। বৈঠকে যেকোনো মূল্যে জজ’র পরিবারকে এলাকা ছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলেও উল্লেখ করে রবিবার (২৫ এপ্রিল) রাতে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সুুুুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী (জিডি নং-১২০৭/২০২১)।
আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী জানান, দখলদারদের পরিকল্পনা ও বৈঠকে অংশ নেয়া একজন জানান, দখলের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও প্রশাসনিক চাপ সামলাতে আশ্রয়ণের নামে তৈরি ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা করা হয়।
এছাড়াও বিচারক পরিবারের বাগান পাহারায় থাকা কয়েকটি ঘরের যে কোনটি বা প্রতিটি ঘরে মাদক-অস্ত্র ঢুকিয়ে শৃংঙ্খলাবাহিনী দিয়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা হয়।
ওই বৈঠকে সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিনের পিতা রফিক আহমেদ, ভাই সরওয়ার অথবা চাচাতো ভাই আনইনজীবী বোরহান উদ্দীন এ তিনজনের মধ্যে যেকোন একজনকে ভাড়াটিয়া মহিলাদের দিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে গণধোলাই দেয়ার পরিকল্পনাও আঁটা হয়।

পাশাপাশি দখলদারদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে ভূমিহীনদের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিচারক কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার বিষয়টা পাকাপোক্ত করা হয়।
আইনজীবী বোরহান আরো জানান, আমরা নিরহ ও শান্তিপ্রিয় পরিবার। আমাদের উপর চলমান জুলুম আইনীভাবে সমাধানের চেষ্টায় হাটছি কাউকে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করছি না। এরপরও এলাকায় সম্মানিত একটি পরিবারকে ফাঁসাতে বিতর্কিত নানা মামলায় জড়াতে গোপন বৈঠকে জঘন্য পরিকল্পনার বিষয়গুলো অবগত হয়ে সাধারণ ডাইরীটি করছি। এতে মূল দখলকার স্থানীয় মেম্বার শেখ কামাল, তার বড়ভাই কামাল উদ্দিন কামালসহ বেশ কয়োকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত কামাল উদ্দীন ওরফে পোস্টার কামাল বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি, আমার পরিবার আওয়ামী লীগ করে। বিচারক কামাল উদ্দীন, আইনজীবী বোরহান তাদের পরিবারের সবাই জামায়াত শিবির ও ভূমিদস্যু।
এরপরও কারো জমি জবরদখল করা আইনসিদ্ধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সরকারি জায়গা দখল করেছি। দখল টিকিয়ে রাখতে আমরা ঢাকায় মানববন্ধন করব, প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করব। বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেবো। তাদের বিরুদ্ধে যা যা করা দরকার সবই করবো।
এদিকে, দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হবার ৫ দিন পরও কেউ গ্রেফতার না হওয়া এবং সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগিতা পাওয়ায় জবর দখলকারিরা উল্টো জজ’র পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য দখলদাররা গোপন পরিকল্পনা করেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে বলেন, আসামীদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানাচ্ছি।
এদিকে, দখলদারদের খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে জানিয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু রাতারাতি দখলদাররা অসংখ্য ঝুপড়িঘর নির্মাণ করে ফেলেছে, তাই তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে প্রস্তুতির কিছু ব্যাপার রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা একটা বৈঠক করেছি। খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমিন-আল পারভেজ বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যেহেতু উচ্চ আদালত আশ্রয়ন প্রকল্পে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জোরপূর্বক অবৈধভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের নাম করে বসতি নির্মাণে বসবাসের সুযোগ নেই। যে কোনও সময় দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়া রফিকের ঘোনা এলাকায় চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দীনের পরিবারের দুই একরের বেশি কৃষিজমি ও সামাজিক বানায়ন দখল করে ‘মুজিবনগর’ নাম দিয়ে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ন’ ব্যানার টাঙিয়ে বেশকিছু ঝুপড়ি নির্মাণ করে দখলদাররা।
ব্যানারে দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি। লেখা হয়েছে-‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। এছাড়াও ব্যানারে দেয়া হয়েছে অভিযুক্ত কামাল উদ্দীন কামালের ছবিও।
জোরপূর্বক যে জমি জবরদখল করা হয়েছে সেটির মালিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ব্রিটিশ ভারতের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ফৌজ আর্মির সদস্য মৃত আবুল হোসেন। তিনি খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিন, হাইকোর্টের আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীসহ পাঁচ ব্যক্তির পরিবার এসব কৃষিজমির মালিক। সহকারী জজ কামাল উদ্দিনের পিতা রফিক আহমদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন।
বাংলাধারা/এফএস/এআর