বিশেষ প্রতিবেদক »
করোনাকালীন কঠোর লকডাউনের সময়ে সরকারী-বেসরকারী সব দফতর বন্ধ রাখার নির্দেশনা সরকারের। কিন্তু এর পরও খোলা সরকারী বেতন স্কেলের ইনিক্রিমেন্ট ফরম ইন্টারনেটে পূরণের মত নানা অজুহাতে। অপরদিকে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখতে বলা হলেও খোলা রয়েছে কোনমতে। সরকার সেবা খাতের দফতরগুলো নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কম সময় খোলা রাখার নির্দেশনাও ভেস্তে যাচ্ছে। সরকারী সেবা কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিসের সিডিউল মানছেন না।
বিশেষ করে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জেনারেল পোষ্ট অফিসে (জিপিও) আগতরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। নানাভাবে হয়রানি করছে জিপিও’তে কর্মরতরা। জিপিও’তে গ্রাহকের ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে এমন অভিযোগ গ্রাকদের।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম জিপিও’র আওতায় ১১০টি পোস্ট অফিস রয়েছে। এসব পোস্ট অফিসে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ডকুমেন্ট রেজিস্টার্ড এডি করা যায়। কিন্তু এর আগেই ক্লোজ করে দিতে হয়। কারণ দেড়টার পর জিপিও শাখা পোস্ট অফিসগুলোর সঙ্গে নগদ লেনদেন ও ডাক নিতে চায় না। এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম জিপিও’র বিরুদ্ধে শাখা পোস্ট অফিসগুলোর।
শুক্র ও শনিবার পোস্ট অফিস বন্ধ থাকলেও রবিবার নগদ লেনদেন বন্ধ রেখেছে জিপিও’র নির্দেশনায়। ফলে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নগদ লেনদেন তথা মানি অর্ডার, রেজিস্ট্রি ও নগদ এ্যাপস’র লেনদেন হয়। সরকারী এমন পরিসেবার ঢিলেমী ও কর্তব্যহীনতার কারণে বেসরকারী এসএ পরিবহন, কন্টিনেন্টাল কুরিয়ার ও সুন্দরবন কুরিয়ার ছাড়াও ছোট পরিসরে গর্জে উঠা অনেকেই এই কঠোর লকডাউনে চাঙ্গা অবস্থানে রয়েছে কুরিয়ার সার্ভিস দিয়ে।

প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়েই চট্টগ্রাম জেলার প্রধান পোস্ট অফিস। জোনারেল পোস্ট অফিসকে (জিপিও) ঘিরে শহরের আনাচে কানাচে থাকা পোস্ট অফিসসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১১০টি পোস্ট অফিসের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকার কথা। কিন্তু বিধি বাম। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লোকাল পোস্ট অফিসগুলো খোলা থাকার কথা। তবে মানি অর্ডার, রেজিস্ট্রি, রেজিস্টার্ড এডি, নগদ এ্যাপসের লেনদেনসহ নানা কার্যক্রম এ সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা শেষ করতে না পারলে নৈশ পোস্ট অফিস ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে জিপিও’তে। কিন্তু কর্মচারীরা নানাভাবে হয়রানি করছে আগতদের।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় জিপিও চট্টগ্রাম দফতরে গিয়ে দেখা গেছে কাউন্টারগুলো প্রায় ফাঁকা। গ্রাহক আছে সেবা নেই। দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও সেবা না দিয়ে গ্রাহকদের বলা হচ্ছে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যাকালীন পোস্ট অফিসের কার্যক্রমের জন্য অপেক্ষা করতে। ফলে আগতরা ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে আছে সময়ঘণ্টা নষ্ট করে।
পটিয়া খেকে আসা নাজির আহমেদ জানান, তাঁর নগদ এ্যাপসের পাসওয়ার্ড তার বাবার আইডি নম্বর অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন কিভাবে হল। এ বিষয়ে সুরাহা নিতে এসেও ফিরে যেতে হয়েছে। কিন্তু নগদ এ্যাপসের কোন সমাধান দিচ্ছেনা জিপিও। অবশেষে খোশগল্প শেষে কাউন্টারের ভেতরে থাকা জিপিও’র কর্মচারীরা চেয়ার ছেড়ে চলে যান।

৫টি রেজিস্ট্রার্ড এডি করতে আসা সালাউদ্দিন জানান, নগরীর পাহাড়তলী পোস্ট অফিস এলাকায় তিনি থাকেন। রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারে ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রতিটি এডির জন্য নিলেন ২৫ টাকা করে। মোট ১২৫ টাকা হলেও ভাংতি না থাকায় ১৩০ টাকাই রেখে দিলেন। কিন্তু ডাকটিকেট দিলেন ১২৫ টাকার। রেজিস্ট্রেশন স্লিপ লেখার দায়িত্বে থাকা মহিলা কর্মচারীর নাম রুমা বড়ুয়া। গ্রাহককে কাউন্টারের ভেতর দিয়ে রুমা বড়ুয়ার কাছে যেতে বললেন। এবার রুমা বড়ুয়ার কার্যক্রম শুরু। তিনি ৫টি ডকুমেন্টের খামের উপর স্বাক্ষর করে সিরিয়াল নম্বর দিলেন বাংলাদেশ ডাক বিভাগের রেজিস্ট্রি রশিদ অনুযায়ী। প্রাপক ও প্রাপকের ঠিকানা সংক্ষেপে লিখলেও প্রেরকের ঠিকানা বা নাম কোনোটিই লিখেননি এই রশিদে। তারিখ বিহীন স্বাক্ষর দিয়ে রুমা বড়ুয়া দাবী করলেন সন্ধ্যাকালীন বিলম্ব ফি দ্বিগুণ। কিন্তু কাউন্টারে নোটিস আকারে সাঁটানো ছিল ২ টাকা। ৫০ টাকা দিলে তিনি ফেরত দেন মাত্র ১০টাকা। অতিরিক্ত টাকার রশিদ চাওয়া হলে রুমা বড়ুয়া বলেন, যা নিয়েছি তাই রশিদ।
রেজিস্ট্রিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রসঙ্গে সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল কাম পোস্ট মাস্টার (ট্রেজারী) বলেন, ‘বেশি নিবে কেন। কে নিয়েছে?’ রুমা বড়ুয়ার কথা বলায় তিনি চুপসে গেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘অনলাইন মিডিয়াকে কোন মন্তব্য দিতে পারবো না।’ অনলাইনের ব্যাপারে নারাজ তিনি।
বাংলাধারা/এফএস/এআই