বাংলাধারা ডেস্ক »
বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শনিবার রাতে বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রাখাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার।
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর কী করবেন, তা জেনে রাখা জরুরি।
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাবার পর করণীয়
প্রথমেই ঘরের অবস্থা যাচাই করে নিন। ঘরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ঘরকে চেষ্টা করুন আরও মজবুত করার জন্য। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে চাইলে মাটিতে খুঁটি পুঁতে ঘরকে বেঁধে রাখতে পারেন দড়ি দিয়ে।
সরকারী-বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিপদ সংকেত পাওয়া মাত্রই বাড়িতে থাকা নারী, শিশু এবং বয়স্কদের যতদ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নিয়ে যান। কোনভাবেই সময় নষ্ট করবেন না।
বাড়ি ছেড়ে যাবার আগে বাড়ির আগুনের উৎসগুলো নিয়ে সতর্ক হোন। আগুন নিভিয়ে যান।
মোবাইল ফোন পর্যাপ্ত চার্জ দিয়ে রাখুন। অতি প্রয়োজনীয় নম্বর যেমন ৯৯৯ সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজন বুঝে তাদের কাছে সাহায্য চান।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যেসব জিনিস রয়েছে সেগুলো পানি নিরোধক পাত্র বা পলিথিনে ভরে মাটির গর্তে পুঁতে রাখুন। আলাদা আলাদা পাত্রে চাল,ডাল, দিয়াশলাই, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো কাঠ, চিনি, ফিটকিরি এবং নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধসহ আরও যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই এভাবে সংরক্ষণ করুন।
গবাদি পশুকে উঁচু কোন স্থান যেমন বাঁধ বা মাটির কিল্লায় রেখে আসুন। গরু বা ছগলকে কোন অবস্থাতেই গোয়াল ঘরে বা অরক্ষিত কোন স্থানে রাখবেন না। যদি নিতান্তই কোন রাখার জায়গা না পান তবে অন্তত ছেড়ে দিয়ে অবলা পশুটিকে বাঁচার চেষ্টা করতে দিন।
যেখানে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন তার আশেপাশে সহজেই ভেঙে পড়তে পারে এমন কোন বিপদজনক গাছ যদি থাকে তবে সেটির বিপদজনক ডালপালা ছেঁটে ফেলতে চেষ্টা করুন।
সবসময় আবহাওয়া বার্তা শুনতে চেষ্টা করুন। আপনার অঞ্চলের জন্য কী নির্দেশনা রয়েছে সেটি পালন করতে চেষ্টা করুন।
দলিলপত্র, জরুরী কাগজ বা টাকা পয়সা পলিথিনে ভালোমতো মুড়িয়ে নিজের সঙ্গে রাখুন। অথবা এমন স্থানে সংরক্ষণ করুন যেখানে নিরাপদ থাকবে। সেক্ষেত্রে এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের অবহিত করে রাখবেন।
নলকূপের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। বিশেষ করে নলকূপের ভেতরে যেন দূষিত বা লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নলকূপের মাথা খুলে আলাদা সংরক্ষণ করুন এবং নলকূপের নিচের অংশটি এমনভাবে পলিথিন দিয়ে বেঁধে ফেলুন যাতে কোনভাবেই এর ভেতরে পানি প্রবেশ করতে না পারে।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে যা করণীয়
ঘূর্ণিঝড় শেষ হয়ে গেলে করণীয় কাজের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়। এজন্য এই সময়টাতে বেশি তৎপর থাকতে হয়।
ঝড়ের পর অনেক গাছপালা ভেঙে পড়ে এবং অনেক গাছ উপড়িয়েও যায়। রাস্তাঘাটের উপর এসব ভাঙা গাছ পড়ে থাকলে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলুন সবাই মিলে। কেননা, রাস্তা ভালো থাকলে যোগাযোগ করা যাবে দ্রুত এবং সাহায্যকারী দলও পৌঁছাতে পারবে তাড়াতাড়ি।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের বাড়িতে ফেরার ক্ষেত্রে সহায়তা করুন। প্রয়োজন পড়লে নিজের বাড়ি বা গ্রামে তাদের আশ্রয় দিন।
ছোট ছোট দল তৈরি করে নিজেরাই নিজেদের কাজে এগিয়ে আসুন। এতে করে কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করা সম্ভব হবে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমানো যাবে।
যত দ্রুত সম্ভব বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারের জন্য দলগতভাবে এগিয়ে আসুন। বিশেষ করে খাল, নদী, পুকুর বা সমুদ্রের মধ্যে থাকা মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন। গবাদি পশুকেও উদ্ধারে এগিয়ে আসুন।
ত্রাণের আশায় বসে না থেকে নিজেরাই কাজে নেমে পড়ুন। ত্রাণ আসার আগেই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। ত্রাণের কারণে যেন কেউ কর্মবিমুখ না হয়ে পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাদেরকে কাজের প্রতি উৎসাহ দিন।
পানি পানের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবল্মবন করুন। পুকুর বা নদীর পানি পান করতে হলে আগে ভালোমতো তা ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে নিতে হবে।
নিজেদের মধ্যে কাজের স্পৃহা ধরে রাখুন এতে করে অনেকখানিই কাটিয়ে উঠতে পারবেন ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ