ksrm-ads

৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

জেমস, নোবেল অথবা আলিয়া ভাট

নাজমুস সাকিব রহমান  »

ইদের দিন (১৪ মে) তরুণ ভোকালিস্ট নোবেলের ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে বেশ কিছু পোস্ট দেওয়া হয়েছে, যার বেশ কয়েকটির বিষয়বস্তু বাংলাদেশের মহান রকলেজেন্ড জেমস। ঝামেলাটা হচ্ছে, জেমসের বয়স, এনার্জি আর সৃষ্টিশীলতার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া নোবেলের পোস্টগুলো জেমসের বিশাল ভক্তশ্রেণি ও যারা তাকে শ্রদ্ধা করেন (কে করেন না?), প্রত্যেকে প্রথম দেখায় চোখের বালিতে পরিণত করে নিয়েছেন।

বাংলাদেশে নরমালি নতুন গান রিলিজ হলে মিউজিশিয়ানরা স্টুপিড কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেন। এরপর হাউকাউ শুরু হয়। এর আগে সিনিয়রদের মধ্যে শাফিন আহমেদ ‘লেজেন্ডকাণ্ড’ করেছেন। যদিও এক্ষেত্রে নোবেলই পাইওনিয়ার। শাফিন আহমেদ নন। আবার, মৃত গান-বাজনার জগতকে জাগাতে এরচেয়ে ভাল পদ্ধতি আপাতত মিউজিশিয়ানদের হাতে নেই—এইরকম অসহায়ও তারা হয়ে থাকতে পারেন।

কাজেই ‘আমি ঘুমাই ঘুমাই জেমসের গান গেয়ে দেব’ বলা নোবেলের পোস্টগুলো পড়ে হাউকাউ হবেই। তা হয়েছেও। অনেকে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। নোবেলের বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সত্যি বলতে জেমস চাইলে নোবেলের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলতে পারেন। কিন্তু তিনি এত সময় নোবেলকে কেন দেবেন? এসব বেকার বিষয়ে সময় দিতে পারেন প্রিন্স মাহমুদ বা আসিফ আকবর। তারা মুরব্বীর ভূমিকা রাখতে পছন্দ করেন। প্রিন্স মাহমুদ তো বক্তব্য রেখেছেনই।

আবার এটা ফানিও। কেউ কেউ নোবেলের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, আগে জেমস হয়ে দেখাও। সত্যি বলতে, এ ধরনের চ্যালেঞ্জ দিলে জেমসের তিন দশকের ক্যারিয়ারের অবমাননা হয়। তার মত রকস্টার বাংলাদেশ আরেকটা বানাতে পারবে না। তার গান গেয়েই তো তরুণদের গায়ক হতে হয়। আর দুইজন জেমস দিয়ে শ্রোতারা কি করবেন? তিনি গাইবেন তো পাগলা হাওয়াই। ইতিহাস নিশ্চয়ই জেনস সুমনের কথা ভুলে যায়নি।

নোবেল রকস্টার নন। জেমসের সাথে তার মিল বলতে তারা দুজনই ভোকালিস্ট। ভ্যারিফাইড পেজ হ্যাক হওয়ার দোহাই না দিলেও সিনিয়র কলিগকে নিয়ে নোবেল এ ধরনের বুলশিট বলার অধিকার রাখেন। কেউ তার কাছ থেকে এই অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না (অর্থহীনের সুমনও রকলেজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর বিরুদ্ধে এমন অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন)। ভাবার বিষয় হচ্ছে, সারা দুনিয়াতেই অধিকাংশ সেলেবদের জেনারেল নলেজ কম। আলিয়ার ভাটের কথাই ধরা যাক। ২০১৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির নাম ভুল বলেছিলেন তিনি। এরপর পুরো ভারত এক হয়ে তাকে ট্রল করেছে।

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, তরুণ বা উঠতি আর্টিস্টদের বুলশিটের ক্ষেত্রে সবাই যে পরিমাণ মুরব্বীগিরি করে, সিনিয়রদের ক্ষেত্রে তা এড়িয়ে যায়। গত ২০ এপ্রিল (২০২১) প্রথম আলোতে আর্কের ভোকালিস্ট হাসানের একটা ইন্টারভিউ ছাপানো হয়। ওইখানে হাসান বলেছেন—’আর্ক আছে, আর্ক থাকবে আজীবন। আমি ফিরব গান নিয়ে, একক বা ব্যান্ড বলে কিছু নেই’। এখানে হাসানকে কেউ বলেনি, আর্ক আশিকুজ্জামান টুলুর ব্যান্ড। এটার মেয়াদ উনিই ঠিক করবেন। আর একক বা ব্যান্ড বলে যদি কিছু না থাকে, তাহলে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো ছাড়া হাসান নিজেকে আর কোনোভাবে সাহায্য করতে পারেন না।

তো, নির্দিষ্ট কোনো গুণ বা দক্ষতার কারণে নোবেল বা হাসানরা প্লেলিস্টে উঠে আসেন। যদ্দিন প্রাসঙ্গিক থাকতে পারেন, থাকেন। কেউ কেউ মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেন না। আবার উল্টোটাও হয়। যেমন, আলিয়া ভাট। আই জেনারেল নলেজ না থাকলেও বসন্তের দিন চলে যায়। আর্টিস্ট হোক ছোট, মাঝারি বা বড়—তাদের বিসিএসের প্রিপারেশন নিয়ে স্টেজে উঠতে হয় না।

নাজমুস সাকিব রহমান
লেখক : গল্পকার, গণমাধ্যমকর্মী

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন