টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। আজ শনিবারও পানিবন্দি হয়ে আছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার হাজারো পরিবার। জরুরি প্রয়োজনেও বাসা থেকে বের হতে পারছেন না অনেকেই। কেউ বের হলেও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে যেতে হয়েছে গন্তব্যে।
পানি বেশি হওয়ায় নগরীর অধিকাংশ সড়কে বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সড়কজুড়ে ছিল রিকশার দাপট। স্বাভাবিক সময়ে ২০ টাকার ভাড়া নেওয়া হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা। যে কারণে লোকজনকে দিনভর চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়।
সকালে সরেজমিন বহদ্দারহাট এলাকায় দেখা গেছে, মূল সড়কেই হাঁটু পানি জমে রয়েছে। বহদ্দারহাট এলাকার প্রতিটি অলি-গলিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি দেখা যায়। এ এলাকায় রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন।
মেয়রের বাড়ির সামনের সড়কটিতে কোমর সমান পানি জমে আছে। পানি ঢুকেছে বাড়িতেও। বাড়ির উঠানে প্রায় কোমর সমান পানি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি ঢুকেছে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন পণ্যের গুদামে। নগরীর বাদুরতলা, বাকলিয়া মাস্টার পোল, কমার্স কলেজ এলাকায় বাসা-বাড়িতে। বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে পণ্য।
এ ছাড়া নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, বলিরহাট, ছোট পুল, বড় পুল, মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, রিয়াজুদ্দিন বাজার, মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন অনেক মানুষ।
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘বৃষ্টিতে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এ বিষয়ে এখনও জানা যায়নি।’
চট্টগ্রামে চার দিন ধরে কখনও থেমে থেমে আবার কখনও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
এদিকে সারাদেশে আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার সকালে অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে এ কথা জানানো হয়।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তরপূর্ব মধ্যপ্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল ও লঘুচাপে পরিণত হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।