ksrm-ads

২৮ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

টেকনাফে বিজিবি-গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, গুলিতে পথচারি রোহিঙ্গার মৃত্যু

কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার লেদা গ্রামে এক ব্যক্তিকে আটকের ঘটনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আত্মরক্ষার অজুহাতে ছুঁড়া বিজিবির গুলিতে মৌলভী মোহাম্মদ রফিক (৩২) নামের এক পথচারি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। গুলিতে আহত হয়েছেন আরো ৫ থেকে ৬ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছেন বিজিবির সদস্যও। গুলি লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদের দরজা-জানালার গ্লাস, বাসাবাড়ির দেয়াল। এসময় টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে জাফর ইকবালকে (৪০) আটক করে বিজিবির সদস্যরা।

নিহত মৌলভী মোহাম্মদ রফিক ২৪ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক/১৩ এর সিরাজুল ইসলামের ছেলে। আহতরা হলেন—হ্নীলার ৮নং ওয়ার্ডের লেদার জালাল আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম রাজু, একই এলাকার নুর হোছনের ছেলে মো. ইসমাঈল, মো. উসমান, হ্নীলার ৯নং ওয়ার্ডের জাদিমুড়া এলাকার নজির আহমদের ছেলে টমটম চালক ওসমান। বাকিদের নাম এখনো পাওয়া যায়নি।

আহতদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পস্থ আইওএম হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের উন্নত চিকিৎসা জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বুধবার (২ জুলাই) বেলা ১টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পুর্ব লেদা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিড়িওতে দেখা যায়, গুলিবৃদ্ধ হয়ে রাস্তায় বৃদ্ধসহ কয়েকজন পড়ে রয়েছেন। পাশের একটি মসজিদের ভেতরেও রক্তের দাগ দেখা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিজিবি সদস্যরা পাশের মসজিদের ভেতরে গিয়েও গুলি ছুঁড়ে।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, হ্নীলার লেদা বাজারে বিজিবি-স্থানীয় ঝামেলা হয়েছে শুনলাম। তবে কি কারণে ঘটনা ঘটেছে তা বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, বিপুল ইয়াবাসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জাফর আলম নামে এক ইয়াবা কারবারিকে আটক করা হয়। ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে গেলে বিজিবির ওপর হামলা, গুলি ও পাল্টা গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হতাহত রয়েছে। বিষয়টি বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

স্থানীয় ফাহাদ বলেন, তার দুলা ভাই জাফর আলম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি গতকাল বাড়ি ফিরেছেন। আজ বেলা ১২ টার দিকে জাফর ইনজেকশন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে লেদা যাওয়ার পথে শুনতে পান তার ভাই রবিউল আলমকে বিজিবি সদস্যরা আটক করে মারধর করছেন। কেন তাকে মারধর করছেন জানতে তিনি সেখানে গেলে রবিউলকে ছেড়ে দিয়ে তাকে বেদড়ক পেটান বিজিবি সদস্যরা। এসময় জাফর আলমের প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে কেন তাকে আটক করা হয় তা জানতে চান। একপর্যায়ে ঘটনাটি বাকবিতণ্ডায় রূপ নেয়। স্থানীয় জনতা জড়ো হলে হৈ চৈ সৃষ্টি হয়। পরে বিজিবি সদস্যরা অকস্মাৎ গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করলে একজনের গায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। গুলিবৃদ্ধ হন আরো বেশ কয়েকজন।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওর্যাডের ইউপি সদস্য নুর হুদা মেম্বার বলেন, বুধবার দুপুরের দিকে জাফর আলমকে লেদা বাজার থেকে বিজিবির সদস্যরা আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুর্ব লেদা বাজারে তার আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয়রা হাইওয়ে সড়কের ওপর বাঁধা দেয়। এসময় জাফরের স্বজন ও স্থানীয়দের সাথে বিজিবির বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে।

তিনি আরো জানান, গুলিতে মৌলভী রফিক নামে এক রোহিঙ্গা নিহত এবং আরো ৫-৬জন স্থানীয় লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত হয়েছেন বিজিবির এক সদস্যও। বিজিবির ছুঁড়া গুলিতে লেদা জামে মসজিদের জানালার গ্লাসে ছিদ্র হয়ে গুরা মিয়া নামে এক বৃদ্ধ মুসল্লির গায়ে গুলি লাগে। লেদা বাজারের একটি বাসার দেওয়ালেও গুলি লেগেছে।

নিহত মৌলভী রফিকের বড় ভাই মো. ইউসুফ বলেন, আমার ভাই লেদা বাজার থেকে ক্যাম্পে ফেরার পথে গুলিতে মারা গেছেন।

তবে, ব্যক্তিগত কাজে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন জানিয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, শুনেছি লেদার সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমের ভাই জাফর আলমের বাড়িতে বিজিবির একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় ইয়াবাসহ এক ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিসহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছে। বিজিবি পাল্টা গুলি করলে একজন নিহতসহ ৫-৬জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ঘটনাটি শুনেছেন উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর শুনেছি। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

 

আরও পড়ুন