কক্সবাজারে পৃথক অভিযান চালিয়ে মাদক চোরাকারবারী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫ কক্সবাজার। এসময় দু’লাখ ইয়াবা, বিদেশী পিস্তল ও দু’রাউন্ড তাজা কাতুর্জও জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোররাতে টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা পূর্ব জাদিমোড়া এলাকার ইমান হোসেনের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত কালু (২১)। তিনি ইয়াবা চোরাচালানকারি আরাফাত নামে পরিচিত। একই উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার মো. হোসাইনের ছেলে আবুল কাশেম (৩৮), তার সহযোগি খুলনার দাখোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের গুনারি এলাকার নওশের মোড়লের ছেলে নুরুজ্জামান (২৮) ও খুলনা সদরের আবুল কালামের ছেলে সাকির আহাম্মদ সাগর (২৬)। কাশেম খুলনার নুরুজ্জামান ও সাগরকে সাথে নিয়ে অস্ত্র ব্যবসা করে আসছিলেন।
র্যাব-১৫’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ জানতে পারে, কুখ্যাত মাদক কারবারী ইয়াসিন আরাফাত কালুর সিন্ডিকেট পার্শ্ববর্তী দেশ হতে মাদকের একটি বড় চালান এনে হ্নীলার পূর্ব জাদিমুড়ায় অবস্থান করছে। এ তথ্যের প্রেক্ষিতে সোমবার দিনগত রাতে র্যাব-১৫’র একটি দল অভিযানে যায়। র্যাবের অভিযান বুঝতে পেরে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে মাদক চোরাকারবারীর অন্যতম হোতা ইয়াসিন আরাফাত কালু। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কালু তার পরিচয় প্রকাশসহ নিজ বসত ঘরে ইয়াবা রাখার কথা স্বীকার করে। বিধি মোতাবেক বসত ঘর তল্লাশী করে খাটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো বিপুল পরিমাণ ইয়াবা জব্দ করা হয়। গুনে সেখানে দু’লাখ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। কালু সিন্ডিকেট মাসে ৮-১০ লাখ ইয়াবা মিয়ানমার থেকে এনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে বলে স্বীকার করেছে। মাদকের টাকা নগদ এবং কখনো কখনো হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিশোধ করতো বলেও উল্লেখ করে কালু।
অপরদিকে, একই রাতে র্যাব-১৫ হোয়াইক্যংয়ের রইক্যংখালী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালায়। এ সময় এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারি হিসেবে পরিচিত আবুল কাশেমসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তল্লাশী করে একটি বিদেশী পিস্তল ও দু’রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আবুল কাশেম একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। সে আধিপত্য বিস্তারে দেশী-বিদেশী অস্ত্র ব্যবসহার করে আতংক সৃষ্টি, চাঁদা আদায় ও পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটাতো। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা করে আসছিল। গ্রেফতার নুরুজ্জামান ও সাগর দু’জনই অস্ত্র ব্যবসায়ী। তারা খুলনা থেকে দেশী-বিদেশী অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে কক্সবাজারের হোয়াইক্যংয়ের উনচিপ্রাং এলাকায় এসে কাশেমের নিয়ন্ত্রণে থাকতো। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রয় করা অস্ত্রের মূল্য বাবদ নগদ অর্থের পাশাপাশি তারা ইয়াবাও নিত। পরে তা খুলনায় নিয়ে সেখানকার মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের বিক্রয় করতো। নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চুরি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে চট্টগ্রাম ও খুলনার একাধিক থানায় ১৩টি মামলা এবং বিভিন্ন মেয়াদে আটবার কারাভোগ করার রেকর্ড আছে। আর সাগরের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা চলমান।
র্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ হতে ইয়াবা ও আইস’র চালান অনুপ্রবেশের যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে তন্মধ্যে টেকনাফের হ্নীলা অন্যতম পয়েন্ট। সীমান্তবর্তী ও দূর্গম এলাকা হওয়ায় হ্নীলাকে কারকবারিরা মাদক পাচারের গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে ব্যবহার করে। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে ইয়াবা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আমাদের যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। তা রোধে র্যাব-১৫ দায়িত্বাধীন বিভিন্ন এলাকায় নজরদারী ও মাদক বিরোধী এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আসছে। র্যাব-১৫ কক্সবাজার গত কয়েক বছরে দু’কোটি ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার ৪১পিস ইয়াবা এবং ৫০টি বিদেশী অস্ত্র, ৪৯৪টি দেশীয় অস্ত্র ও এক হাজার ৬২৭ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চিহ্নিত অনেক অপরাধীকে।