ksrm-ads

২৫ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে বছরে ৫ প্রাণীর মৃত্যু, মুমূর্ষু ‘টুম্পা’

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বন্দি প্রাণীর মৃত্যুর হার বাড়ছে। বার্ধক্যজনিত ও সাধারণ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত একবছরে মারা গেছে হাতি-সিংহসহ পাঁচ প্রাণী। এত উন্নয়নের পরও সীমানা প্রাচীরের ২১টি পয়েন্ট অরক্ষিত। সেসব স্থান দিয়ে অনায়াসে পার্কে ঢুকছে বন্য হাতির পাল। এরা পার্কে গাছগাছালি ও স্থাপনা নষ্ট করছে। অরক্ষিত স্থান দিয়ে বের হওয়া হরিণ নিখোঁজ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। একে কর্তৃপক্ষের অবহেলা হিসেবে গণ্য করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে প্রকৃতি ও পর্যটন প্রেমীরা।

নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, গতবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রায় এক বছরে তিনটি সিংহ ও দুটি হাতি মারা যায় সাফারি পার্কে। তন্মধ্যে, ৮৬ বছর বয়সী ‘রঙমালা’ নামক হাতিটি গত ৩০ ডিসেম্বর বার্ধক্য ও পিত্রথলিতে আড়াই কেজি ওজনের গলব্লাডার (পাথর) জমে মারা যায়। ‘সৈকত বাহাদুর’ নামক ৩২ বছর বয়সী হাতি মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর। বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগে গতবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মারা যায় ২২ বছর বয়সী সিংহ ‘সোহেল’।

পার্কে সঙ্গী সম্রাটের সাথে মিলনের সময় আহত ১০ বছর ৮ মাস বয়সী সিংহী ‘নদী’, ‘ফিলাইনলিউকিমিয়া’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় গতবছরের ২২ এপ্রিল। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মারা যায় ১৬ বছর বয়সী সিংহ ‘রাসেল’। এই সিংহটি এনাপ্লাজমা ও বিউবমিয়া স্পিসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বলে জানিয়েছেন প্রাণী চিকিৎসক টিম। একই রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে রাসেলের বোন ১৫ বছর বয়সী সিংহী ‘টুম্পা’।

সূত্রমতে, একই সময়ে পার্কে উন্মুক্ত বিচরণরত প্রায় ৪’শ হরিণের মধ্যে ৩০-৪০টি হরিণ নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া অরক্ষিত সীমানা প্রাচীর দিয়ে বছরে কয়েকবার বন্যহাতি প্রবেশ করে নষ্ট করে গাছগাছালি। এতে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয় দর্শনার্থীদের।

হরিণ নিখোঁজ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাফারী পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৯শ হেক্টর বিশিষ্ট সাফারী পার্কের বাউন্ডারি ওয়ালের ২১টি পয়েন্ট এখনো অরক্ষিত। ওই স্থান দিয়ে পার্কের হরিণ নিকটস্থ জঙ্গলে বের হলে ওৎ পেতে থাকা শিকারীর খপ্পরে পড়ে ফের পার্কে ফিরে আসতে পারেনা। তবে, কয়টি হরিণ নিখোঁজ রয়েছে তা জানা নেই। পার্কে অসংখ্য হরিণ রয়েছে। গণনার ব্যবস্থা থাকলে সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা যেত।

তত্ত্বাবধায়ক আরো বলেন, বর্তমানে ১-৪৫ বছর বয়সী ৪টি হাতি পার্কে রয়েছে। অসুস্থসহ ৩টি সিংহী ও ১টি সিংহ আছে পার্কে। অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী গুলো রয়েছে সুস্থ-সবল। নিয়মিত দেখভালসহ পর্যাপ্ত খাদ্য দেয়া হচ্ছে পশু পাখিগুলোকে।

৩টি সিংহ ও ২টি হাতি মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রাণী অসুস্থ হলে সুস্থ করে তুলতে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। যেগুলো মারা গেছে তাদের ব্যাপারেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছে মেডিকেল টিম। এরপরও বার্ধক্য এবং জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫টি প্রাণী মারা যায়। সিংহী টুম্পাকে সারিয়ে তুলতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন চিকিৎসক টিম, এমনটি দাবি পার্ক তত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলামের।

ট্যুরস অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার মোস্তফা বলেন, কক্সবাজারের দীর্ঘতম সৈকতের পর প্রকৃতি প্রেমীদের পছন্দের স্থান বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এখানকার সুবিশাল বৃক্ষরাজি, সবুজ প্রকৃতি, নানান প্রাণী দেখে বিমোহিত হন। পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরে, আনন্দে বেরিয়ে আসা যায়। কিন্তু পার্কে যদি বন্যহাতি ঢুকা রদ করা না যায়, তাহলে আতংক তাড়া করে দর্শনার্থীদের।

এ বিষয়ে পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, যে অংশ দিয়ে বন্য হাতি প্রবেশ হয় সেটা পার্কের পূর্ব পাশে লামা অংশে। দর্শনার্থী থাকে পার্কের পশ্চিমাংশে। এপাশে বন্য হাতি আসার কোন স্কোপ নেই। তাই দর্শনার্থীদের আতংকিত হবার কোন কারণ নেই।

আরও পড়ুন