ksrm-ads

১৬ মার্চ ২০২৫

ksrm-ads

ঢাকার ১০২০ যাত্রী নিয়ে পর্যটন শহরে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’

বিজয়ের মাসে প্রতীক্ষিত যাত্রার পর পর্যটক নিয়ে প্রথম পর্যটন শহরে এসেছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ রেলটি। শুক্রবার রাতে ১০২০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন হতে যাত্রা কর রেলটি শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে এসে পৌঁছে বলে জানান কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিকুর রহমান।

তিনি জানান, সিডিউল ছিল সকাল সোয়া ৭টায় প্রথম রেলটি স্টেশনে পৌঁছাবে। যাত্রায় একটু বিলম্ব হওয়ায় পৌঁছাতেও আঁধাঘন্টার মতো বিলম্ব হলো। সংশ্লিষ্ট সবাই রেলটি আসার অপেক্ষায় ছিলাম। ঢাকাগামী যাত্রীদের যেভাবে ফুল দিয়ে অভিবাদন জানানো হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে রেলে প্রথম পর্যটক হয়ে আসা যাত্রীরা নামার সাথে সাথে ফুল ও লিফলেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ হতে তাদের অভিবাদন জানিয়ে ঝামেলামুক্ত ভাবে স্ব স্ব গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

কক্সবাজার এক্সপ্রেসে প্রথম কক্সবাজার আসতে পেরে উচ্ছসিত পর্যটক গাজীপুরের শ্রীপুরের আবুল কালাম। তার মতে, যারা বাসে দূরের যাত্রা করতে পারে না এবং বিমানের ব্যয়বহুল ভাড়া যাদের অসাধ্য তাদের জন্য রেল সংযোগ সরকারের একটি বড় উপহার। যোগাযোগের ক্ষেত্রে পর্যটকদের কক্সবাজার আগমন খুবই আরামদায়ক হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনিসহ অন্য যাত্রীরা।

এর আগে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। পর্যটন এবং যাত্রী সেবার কথা মাথায় রেখে স্থাপন হওয়া রেল যোগাযোগে কক্সবাজারের এই পথে ওর্যায়ক্রমে আরো ট্রেন সংযুক্ত করা হবে। প্রথম দিন ২০টি বগি নিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস এক হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা করেছে। স্বপ্নের প্রথম যাত্রা শুরু করতে আগেই সব প্রস্তুতি নেয়া ছিল। একসপ্তাহ আগেই যাত্রার টানা নয়দিনের টিকেট আগাম বিক্রি হয়।

রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, কক্সবাজার এক্সপ্রেসের গতিসীমা নির্ধারণ ১২০ কিলোমিটার। যাত্রা পথে এটি চট্টগ্রাম ও ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্টেশনে দাঁড়ায়। দিনে ছেড়ে যাওয়া রেলটি রাত নয়টার দিকে ঢাকায় পৌঁছায় আর রাতে ছেড়ে আসা রেলটি সকালে পৌঁছাচ্ছে কক্সবাজার।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ফরহাদ বিন চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের সব প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করা হয়েছিল। প্রথম রেলে কক্সবাজার থেকে ১০২০ যাত্রী এবং ঢাকা হতে সমপরিমাণ যাত্রী আনা-নেয়া হয়েছে। এই রুটে আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করবে। কক্সবাজার থেকে ট্রেন ছাড়বে দুপুর সাড়ে ১২টায়। চট্টগ্রাম হয়ে এটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সোয়া নয়টায়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে পরদিন সকাল সোয়া সাতটায়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১০ জন রেলওয়ে পুলিশ নিয়োজিত থাকছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ৬৯৬ টাকা।

গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেল পথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রেল নেটওয়ার্কে ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয় কক্সবাজার জেলা।

কক্সবাজারে নির্মাণ করা আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন প্রকল্পের প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার জানান, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালামাল রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্বলিত স্টেশনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, এমনকি প্রার্থনার স্থানও। স্টেশনে ফুড কোর্ট, হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের বিষয়টি বাইরের এজেন্সি দ্বারা টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। এ প্রকল্পের সবকাজ শেষ করার সময় সীমা ২০২৪ সালের জুনে পর্যন্ত।

কক্সবাজারের সঙ্গে শুধু ঢাকা নয়, পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গেও এ রেলপথ যুক্ত হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড হুমায়ুন কবির।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ