কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের তেতৈয়া ‘রফিকের ঘোনায়’ বন্দোবস্তি ও বনের জমি দখলে অবৈধ আশ্রয়ণ ও জজ’র পরিবারের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত প্রধান তিনজনকে ঢাকায় আটক করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামাল উদ্দিন কামাল (৪০), তার ভাই স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য শেখ কামাল মেম্বার (৩৮) ও মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৪১)। তারা তিনজনই কক্সবাজার সদর মডেল থানার মামলা নং-৩৬/২৫৫ এর প্রধান অভিযুক্ত। কামাল উদ্দিন ও শেখ কামালের বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত ২০ এপ্রিল তেতৈয়া রফিকের ঘোনার মালিক মৃত হাজি আবুল হোসেনের ছেলে রফিক আহমদ মামলাটি করেছিলেন।
জমিদখল হওয়া ভিকটিম পরিবারের সদস্য ও হাইকোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি অবগত নন জানিয়ে বলেন, মামলা হয়েছে ঠিক-তবে এব্যাপারে কাউকে এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়নি। এরপরও খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানী জানান, রফিকের ঘোনায় আমাদের ও বনের জমি দখলের মামলার পর থেকে আসামিরা নানাভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই মাঝে প্রধান তিন আসামি মো. কামাল, শেখ কামাল মেম্বার ও আবু বক্কর ছিদ্দিক গ্রেফতার এড়াতে ঢাকায় এক সাংসদের বাসায় আত্মগোপনে চলে যান। আজ (মঙ্গলবার) সকালে তারা ঢাকায় পৌঁছে একটি হোটেলে উঠে রেস্ট নিচ্ছিল। খবরটি পুলিশকে অগত করা হলে, তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে এ তিনজনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। কিন্তু ডিএমপির ডিবির বরাত দিয়ে আইনজীবী বোরহান বলেন, আটকদের জেলা পুলিশ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আটকের কথা ছিলো না বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ মামলার অন্য আসামীরা হলেন, আবু ছৈয়দ প্রকাশ মুন্সি আবু ছৈয়দ (৪৫), মো. ইলিয়াছ (৩৫), মো. কাসেম (৩৪), মনিউল আলম (৩৮), শাহিন আলম (৪০), মিজানুর রহমান (২৯), সেলিম উল্লাহ (৩১) ও হামিদ হোসেন (৪৩)। মামলায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি-সবজি ক্ষেত বিনষ্ট করে ক্ষতিসাধন, ব্যাপক মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এতে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদিপক্ষ নির্ভরযোগ্য সুত্রের বরাতে জানিয়েছে, দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে ‘মহা কূট পরিকল্পনা’ হাতে নিয়ে এগুচ্ছে দখলবাজচক্র। নিজেদের তৈরীকৃত ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে জজ’র পরিবারকে ফাঁসানোসহ অনেক ফন্দি আঁটছে তারা। ধাপে ধাপে জমির মালিকদের এলাকা ছাড়া করার সিদ্ধান্তও নেয় তারা। এ সব নিয়ে গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) গভীর রাতে গোপন বৈঠক করেছে। বাগান পাহারায় নির্মিত ঘরে মাদক-অস্ত্র ঢুকিয়ে যেকোন বাহিনীকে ব্যবহার করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও করে তারা। চট্টগ্রাম জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিনের পিতা রফিক আহমেদ, ভাই সরওয়ার অথবা চাচাতো ভাই বোরহান উদ্দীন এই তিনজনের যে কোন একজনকে ভাড়াটিয়া মহিলা দিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে গণধোলাই দিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে ভূমিহীনদের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিচারক কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত হয়। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আনইনজীবী বোরহান উদ্দীন গত ২৫ এপ্রিল রাতে কক্সবাজার সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন (যার নং-১২০৭/২০২১)।
ছকমতে এগুতে তারা পরামর্শ করেছে আশ্রয়দাতা নেতাদের সাথে। তাদের পরামর্শে ঢাকায় আত্মগোপনে যান এবং কৌশলে আগাম জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে বীরদর্পে অপকর্ম করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মামলায় অভিযুক্তরা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের তেতৈয়া রফিকের ঘোনায় সহকারী জজ কামাল উদ্দীনের পরিবারের দুই একরেরও বেশি কৃষিজমি ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অধীনে বরাদ্দকৃত সামাজিক বানায়ন দখল করে ‘মুজিবনগর’ আশ্রয়ণ নাম দেয়া হয়। ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ন’ ব্যানার টাঙিয়ে রাতারাতি বসানো হয় বেশকিছু ঝুপড়ি ঘর।
দখল নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সঙ্গে উদ্যোক্তা হিসেবে অভিযুক্ত কামাল মো. উদ্দীন কামালের ছবিও দেয়া হয়। ব্যানারে লেখা হয়েছে-‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দখলকৃত জমির বন্দোবস্তি মালিক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ব্রিটিশ ভারতের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ফৌজ আর্মির সদস্য মৃত আবুল হোসেন। তিনি খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দিন, হাইকোর্টের আইনজীবী বোরহান উদ্দীন রব্বানীসহ পাঁচপরিবার এসব কৃষিজমির মালিক। রয়েছে বন বিভাগের সৃজিত সামাজিক বনায়নভুক্ত জমিও।
বাংলাধারা/এফএস/এআর