বাংলাধারা প্রতিবেদন »
বিশ্বকাপের ঠিক আগে অয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজেও ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। সিরিজে সেরা উইকেট শিকারীর তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন মাশরাফি। চার ম্যাচে নেন ছয় উইকেট। তার চেয়ে বেশি উইকেট ছিল না কোনো টাইগার বোলারের। অথচ আয়ারল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডে এসেই বিবর্ণ হয়ে পড়লেন ম্যাশ।
বিশ্বকাপে নিয়মিত বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মাশরাফি বিন মতুর্জার। ছয় ম্যাচে ২৬৪ বল করে টাইগার দলপতি দিয়েছেন ২৭৯ রান। পেয়েছেন একটি মাত্র উইকেটের দেখা।
তবে কি ফুরিয়ে গেছেন ম্যাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে মালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে সেমি-ফাইনালে যেতে না পারার জন্য সরাসরি মাশরাফিকেই দুষছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এরিমাঝে উঠেছে তার অবসরের গুঞ্জনও।
অবসর নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেশে ফিরেই নেবেন, এমনটাই জানিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরিস্থিতিতে এসেছে কিছুটা বদল। ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মাঠ লর্ডসে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটা কি অধিনায়কেরও শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে?
পাকিস্তানের বিপক্ষে নামার আগের দিন (৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে আসলে সরাসরিই হয়তো তার দিকে এই প্রশ্ন যেত। কিন্তু মাশরাফি আসেননি। এমনিতে সংবাদ সম্মেলনে আসা অধিনায়কদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু সাধারণত গণমাধ্যমকে কখনোই এড়িয়ে না চলায় টানা দুদিন তার গণমাধ্যমের সামনে না আসা দিচ্ছে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত।
বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচের আগে কেন এলেন না অধিনায়ক? বাংলাদেশ দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘স্বস্তি বোধ করেননি, তাই আসেননি।’
মাশরাফি এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের সামনে আসতে স্বস্তিবোধ করছেন না। এই তথ্যই বলে দেয় পরিস্থিতি বদলেছে কতটা। জানা গেছে, অবসর নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এমনিতে হ্যামস্ট্রিংয়ের বেশ বড়সড় চোট নিয়েও খেলে গেছেন পুরো বিশ্বকাপ। ওটা সামলে করতে পারেননি ভালো পারফরম্যান্স। ৭ ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট নেওয়ায় তার দলে থাকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বাংলাদেশের অনেক সাফল্যের নায়ক এই অবস্থায় ক্যারিয়ারকে আর প্রলম্বিত করার কোনো তীব্র ইচ্ছাই না-কি বোধ করছেন না।
আরেকটা কারণও মাশরাফির এখানেই থেমে যাওয়ার পক্ষে দিচ্ছে জোরালো যুক্তি। সামনের কয়েক মাসে বাংলাদেশের ওয়ানডেও আছে খুব সীমিত। দেশের মাঠে চলতি বছর নেই কোনো নির্ধারিত ওয়ানডে সিরিজ। মাশরাফি যদি দেশের মাঠে অবসর নিতে চান, তার জন্যও অপেক্ষা করতে হবে লম্বা সময়। তবে চলতি মাসেই শ্রীলঙ্কায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চ, লর্ডসের মতো ঐতিহ্যে মোড়ানো মাঠের চেয়ে শ্রীলঙ্কা কখনোই ভালো কোনো মঞ্চ নয়।
ঘরের মাঠে আফগানিস্তান বা জিম্বাবুয়েকে ডেকে অবশ্য মাশরাফির জন্য একটা বিদায়ী সিরিজ আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু কেবল তার জন্যই একটা সিরিজ আয়োজনে সংকোচ থাকার কথা অধিনায়কের নিজেরই।
আপাতত মাশরাফির অবসর নিয়ে গুঞ্জনই সারকথা। অফিসিয়াল ভাষ্য জানার কোনো উপায় নেই। কোচ স্টিভ রোডস বরং আকুতি জানালেন, আগে থেকে প্রভাবিত না করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিয়ে যেন দেশের সফলতম অধিনায়ককে সম্মানটুকু দেওয়া হয়, ‘মাশরাফি নিজেই বোর্ডকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার মনে হয়, সবাইকে উচিত তাদের উপর সিদ্ধান্তের ভার দেওয়া। আমার মনে হয়, মিডিয়ার অনেক বড় বড় খবর সত্ত্বেও তাকে যেন সম্মানটা দেওয়া হয় সে কি করবে বা কি করবে না।’
২০১৭ শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকেও আচমকা অবসর নিয়েছিলেন মাশরাফি। টসের আগে নিজের ফেসবুক পাতায় আর টসের সময় দিয়েছিলেন অবসরের ঘোষণা। ওয়ানডেতেও তেমনটি ঘটার সম্ভাবনা এখন একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর