বাংলাধারা প্রতিবেদক»
চট্টগ্রাম সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসীন কলেজের ছাত্র শাকিল হোসেন রাব্বি। ফেসবুকে তার সঙ্গে পরিচয় হয় এক তরুণীর, এরপর তৈরি হয় বন্ধুত্ব। একপর্যায়ে তা রুপ নেয় প্রণয়ে। কিছুদিন পর ওই তরুণী আঁচ করতে পারে— যার সঙ্গে সে দেখছে ঘর বাঁধার স্বপ্ন, সে মনের মতো নয়। তাই প্রায় আড়াই বছরের সম্পর্কে ধরে ফাঁটল। ‘ব্যর্থ প্রেমিকের’ তকমা লাগিয়ে থানায় গিয়ে আত্মহত্যা হুমকির দেয়ার ‘নাটক’ও করে শাকিল। তারপরের দিনই ওই তরুণীকে অপহরণ করে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে সে। এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ইপিজেড থানায় মামলা ঠুকেছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে মামলার বিষয়টি বাংলাধারাকে নিশ্চিত করেছেন ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবিরুল ইসলাম।
এর আগে রবিবার (৩১ জুলাই) ভুক্তভোগী তরুণীকে চট্টগ্রামের হালিশহরের ঈদগাঁওয়ের বাসা থেকে অপহরণ করা হয়। সোমবার (১ আগস্ট) রাতে ইপিজেড থানায় অভিযুক্ত যুবক শাকিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
শাকিল হোসেন রাব্বি ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় সপরিবারে ভাড়ায় থাকতেন। তার পিতা নৌবাহিনীর সিভিল স্টাফ হিসেবে কর্মরত।
ভুক্তভোগী তরুণীর মামা সুমন বাংলাধারাকে বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে আমার ভাগ্নীর সঙ্গে ওই ছেলের (শাকিল) পরিচয় হয়। এরপর এক পর্যায়ে তারা সম্পর্কে জড়ায়। আমরা সেটি এতদিন জানতাম না। প্রায় ৬ মাস আগে শাকিলের সঙ্গে আমার ভাগ্নীর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। এরপরই আমরা জানতে পারি সম্পর্কের কথা। কিন্তু আমার ভাগ্নী ওই ছেলেকে পছন্দ করেনা এখন। কারণ ওই ছেলে খুবই বেয়াদব প্রকৃতির এবং বদমেজাজি। গত শনিবার সে থানায় গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ঠিক তার পরের দিন রবিবার বিকেল ৫টার দিকে হালিশহর থানার ঈদগাঁও কাঁচারাস্তা এলাকায় বাসার সামনে থেকে আমার ভাগ্নী নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখোঁজি করে না পেয়ে ওই ছেলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি সে আমার ভাগ্নীকে অপহরণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভাগ্নীকে ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিলেও তারা আমার ভাগ্নীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং তাকে এক পর্যায়ে শাকিল ধর্ষণ করে। উপায়ন্তর না পেয়ে আমি রাতেই ৯৯৯-এ ফোন করি। এরপর আমি ইপিজেড থানায় গেলে সেখানকার কর্তব্যরত অফিসারদের পরামর্শে পাহাড়তলী থানায় একটি নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করি। এরপর সেই জিডির কপি নিয়ে ইপিজেড থানায় যাই। এরপর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে পুলিশসহ গিয়ে আমার ভাগ্নীকে উদ্ধার করে আনি।’
তিনি বলেন, ‘ছেলের বাবা সব জানতো। থানায় গিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ ‘নাটক’। কারণ আমি যখন আমার ভাগ্নীকে মিমাংসার মাধ্যমে ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিই তখন ছেলের বাবা সেটা কোনভাবে মানতে রাজি হয়নি। উলটো আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় তারা। পুলিশের সামনেও আমাকে মারতে উদ্যত হয় ওই ছেলে। সে চরম বেয়াদব।’
ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে ওই তরুণীকে তার বাসা থেকে জোর করে তুলে এনে আটকে রেখেছে। এরপর তাকে ধর্ষণ করছে। আমরা অভিযোগ নিয়েছি, মামলাও নিয়েছি।’ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত শনিবার (৩০ জুলাই) রাতে তার বন্ধু সজিবসহ ইপিজেড থানায় গিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয় শাকিল। ছাদ থেকে এর আগেও লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে জানায় ওই যুবক। ছেলের পাগলামির খবর পেয়ে থানায় ছুটে যায় তার বাবা। এরপর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই যুবককে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তার বাবার হাতে তুলে দেন।
বাংলাধারা/আরএইচআর