ksrm-ads

১৩ জানুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

তৈরি পোশাকে বাড়ছে মূল্য সংযোজন

বাংলাধারা প্রতিবেদক »

তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বিদেশে বিপুল অর্থ পাঠাতে হয়। রপ্তানি আয় থেকে বিদেশে ফেরত পাঠানো অর্থের হার রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪০ ভাগ। মূলত, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানি করতে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যায়। কিন্তু সম্প্রতি এ হার কিছুটা কমেছে। বেড়েছে মূল্য সংযোজনের (ভ্যালু অ্যাড) হার।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, স্থানীয় কাপড়ের ব্যবহার বৃদ্ধি ও বেশি মূল্যের পোশাক তৈরিতে মনোযোগ দেওয়ায় তৈরি পোশাকে মূল্য সংযোজন বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে মূল্য সংযোজনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের দুই অর্থবছরে এ হার ছিল ৬০ ও ৬১ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ হার ছিল ৬৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে মোট রপ্তানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। এর মধ্যে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়েছে ৬ দশমিক ২৮১ বিলিয়ন ডলারের। যা মোট রপ্তানি মূল্যের ৬৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। টাকার অংকে যা প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা।

তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে কাঁচামাল রপ্তানির জন্য বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা চলে যায় বিদেশে। তৈরি পোশাক কারখানার উদ্যোক্তাদের শিল্পের উচ্চ মূল্যের পোশাক দিকে মনোযোগ দেওয়া, আন্তর্জাতিক মানের কারখানা প্রতিষ্ঠা, স্থানীয়ভাবে কেমিকেল উৎপাদন বৃদ্ধি ও স্থানীয়ভাবে তৈরি পোশাকের উপকরণের সংগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্য সংযোজন বেড়েছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্পে উদ্যোক্তা নেতা ও বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, মূল্য সংযোজনের বর্তমান উর্দ্ধমুখি হার অব্যাহত রাখতে টেক্সটাইলকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহযোগিতার হার বাড়াতে হবে। এটা সম্ভব হলে বর্তমানে যে হারে মূল্য সংযোজন হচ্ছে তা আরও বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে শুধু তুলা আমদানি করতে হবে।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সব চেয়ে বেশি মূল সংযোজন করছে নীট গার্মেন্ট উপখাত। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সমিতি বিকেএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী নীট গার্মেন্ট রপ্তানিতে মূল্য সংযোজনের হার ৮০ ভাগের উপরে। আর ওভেন গার্মেন্ট রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন হয় ৫০ ভাগের নীচে।

বিকেএমইএ-এর সিনিয়র সহসভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, নীট তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যবহৃত কাপড়, সুতা, বোতাম থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের উপকরণ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। উন্নত কিছু লেস বা কাপড় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সেটাও বড় কিছু কোম্পানি নিজেরা করছে। তুলনামূলক ছোট কারখানা কিছু কাচাঁমাল আমদানি করছে। সেটাও বড় জোর ৬ থেকে ১০ শতাংশ হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ১৬০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে নীট তৈরি পোশাক ছিল ১৫ দশমিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের। আর বাকী ১৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় হয় ওভেন গার্মেন্ট রপ্তানি করে।

তৈরি পোশাক উদ্যেক্তাদের মতে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়। এরপর রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক শিল্পে ধাক্কা লাগে। এ ধাক্কা সামাল দিতে বেগ পেতে হয় এ শিল্পকে। না হলে এ শিল্প আরও এগিয়ে যেতে পারতো এবং পশ্চাদসংযোগমুখি কারখানা গড়ে উঠতো। ফলে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবেই সংগ্রহ করা যেতো। যা শুরুও হয়েছিল। রানা প্লাজা ধসের পর কারখানা গোছাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে শিল্প উদ্যোক্তাদের।

মনসুর আহমেদ বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে মূল্যসংযোজন বাড়াতে হলে স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু পর্যাপ্ত মূলধন না থাকার কারণে দেশে পশ্চাদসংযোগমুখি শিল্প গড়ে উঠছে না। ব্যাংক ঋণের সুদ বেশি হওয়ার কারণে উদ্যোক্তারাও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে রপ্তানি না বাড়িয়েও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা ছিল তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন