ঈদুল আজহা
ত্যাগ ও আনন্দের উৎসব
বছর ঘুরে আবারও ফিরে এসেছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি প্রিয় বান্দা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা এবং গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইব্রাহিমকে (আ.) আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কোরবানি করতে নির্দেশ দান করেন।
কোরবানির মূল কথা হল ত্যাগ। সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে দরিদ্র প্রতিবেশীদের মধ্যে এর মাংস বিতরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
প্রতি বছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র হজের পরই কোরবানি দেয়া হয়। পাঁচ দিন ধরে চলে হজের আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসলমান আরাফাত ময়দানে সমবেত হন। এটি মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্তও বটে।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে, রাব্বুল আলামিনের কাছে কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস কিছুই পৌঁছায় না, শুধু পৌঁছায় বান্দার তাকওয়া। কাজেই কোরবানি কোনো লোক দেখানো বা প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। কোরবানির অর্থ হলো ত্যাগ বা উৎসর্গ। আল্লাহ তায়ালা প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করতে বলেছেন। আমরা যেন তাঁর আদেশ পালন করি অন্তরের তাগিদে, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়।
কোরবানির মাধ্যমে আমরা সুদৃঢ় করব মানুষে মানুষে ভালোবাসা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দরিদ্র মানুষের জন্য উন্নতমানের আহারের ব্যবস্থা করা যায়।
সব ধর্মেই দানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। মানবতার সেবাই তো প্রকৃত ধর্ম। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, সমাজ তথা মানুষের ভেতরের পশুশক্তিকে দমনই হচ্ছে কোরবানির মূল কথা। ঈমানদার মুসলমানরা তা-ই করেন। এ ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের পথ ধরে লাভ করা যায় আল্লাহর নৈকট্য।
নগরীতে পশু কোরবানি-পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সিটি কর্পোরেশনকে তৎপর থাকতে হবে। নগরবাসীর প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারাও যেন পশু কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। রাস্তার ওপর বা যত্রতত্র কোরবানি দেয়া অনুচিত। এতে পরিবেশ দূষিত হয়। ঈদের পবিত্রতা সব ক্ষেত্রেই বজায় রাখা প্রয়োজন।
ঈদ মানে আনন্দ। আল্লাহ এ আনন্দে দরিদ্রদের শরিক করার জন্য তার ধনী বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন। লোক দেখানো ধর্মীয় আচার পালনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা, সহযোগিতা, বন্ধুত্ব, মমতা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে ঈদুল আজহার আদর্শকে আমরা সমুন্নত রাখতে পারি। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বিশ্বের সব মুসলমানকে সে হেদায়েত দান করুন।