ksrm-ads

২৭ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

দক্ষিণের দাপটে মুখ থুবড়ে পড়ছে বলিউড

সুমন বৈদ্য »

অশোক কুমার অভিনীত ‘কিসমত’ বলিউডের প্রথম ব্লকব্লাস্টার ছবি। ১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি প্রথম ভারতীয় সিনেমা, যা বক্স অফিসে এক কোটি রুপি আয় করেছিল। বোম্বে টকিজের প্রযোজনায় বাঙালি পরিচালক জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের এই ছবির পর ভারতীয় চলচ্চিত্র দুনিয়ায় বলিউডের জয়রথ দুর্বার গতিতে চলতে থাকে। এরপর অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার থেকে শুরু করে হালের জনপ্রিয় নায়ক নায়িকাদের নিয়ে নানা ব্যবসা সফল সিনেমা দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করছিলো বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। বছরের পর বছর চলতে থাকা এ জয়রথ যেন থমকে গেছে বিগত দুই বছরে। একের পর এক ফ্লপ হচ্ছে হিন্দি ছবি-নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী থেকে প্রযোজকদের ঘুম হারাম।

সাম্প্রতিক বেশকিছু দক্ষিণী সিনেমার দাপটে এখন সেই আধিপত্য হারাতে বসেছে বলিউড পাড়া। ২০২২ সালে পরপর দুই দক্ষিণী সিনেমা ‘আর আর আর’ ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার ২’, ‘পুষ্পা দ্যা রাইজ’র দাপটে দাঁড়াতে পারেনি কোনো বলিউড সিনেমা। এমন বাজে সময় গত সাত দশকেও দেখেনি বলিউড। বড় বাজেট, ছবিতে একাধিক বড় তারকা, ব্যাপক প্রচারণা-কোনো টোটকাই কাজে লাগছে না। ব্যর্থতার মিছিলে নাম লিখিয়েছে ‘পৃথ্বীরাজ’, ‘লাল সিং চাড্ডা’, ‘এইট্টিথ্রি’, ‘রানওয়ে থার্টিফোর’, ‘জার্সি’, ‘বচ্চন পান্ডে’, ‘শামসেরা’, ‘ধাকড়’, ‘রক্ষাবন্ধন’, ‘বাধাই দো’, ‘ঝুন্ড’, ‘হিরোপান্তি ২’, ‘গেহরাইয়া’, ‘অ্যাটাক’সহ আরও অনেক ছবি।

অক্ষয় কুমার, জন আব্রাহাম থেকে শুরু করে আমির খানের মতো অভিনেতাদের ও পেতে হয়েছে ফ্লপ সিনেমার ট্যাগ। একের পর এক ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হওয়ায় রুটিরুজিতে টান পড়ছে অভিনেতা, নির্মাতা থেকে শুরু করে বহু চলচ্চিত্রকর্মীর।

অপরদিকে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির গ্ৰহণযোগ্যতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে চারিদিকে। প্যান ইন্ডিয়া আকারে সিনেমা রিলিজের কারণে দর্শকদের বলিউডের বাইরেও এখন সিনেমা দেখার আগ্রহতা বেড়েছে। অরিজিনাল গল্প, গল্পের মধ্যে সুন্দর গাঁথুনি, গল্প অনুযায়ী সিনেমায় প্রয়োজনীয় কাস্টিং এবং অতি সাধারণতা অবলম্বনের জন্য দক্ষিণী ছবি আজ সবার শীর্ষে। তাছাড়া তাদের একটা সুন্দর ব্যাপার হলো তারা হিরোসিজমকে এতো প্রাধান্য না দিয়ে তাদের সাধারণভাবে প্রর্দশন করার চেষ্টা করে।

দক্ষিণী সিনেমা নিয়ে নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপ মনে করেন, দক্ষিণি ছবিগুলো নিজেদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। তামিল, তেলেগু, মালয়ালম ও কন্নড় ছবির নির্মাতারা নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে ছবি বানান। কিন্তু হিন্দি ছবির কোনো শিকড় নেই। নির্মাতারা নিজেদের শৈলী ও ঘরানার বাইরে গিয়ে ছবি করছেন। এই নতুন শৈলী বিপুলসংখ্যক দর্শকের বোধগম্য হচ্ছে না।তিনি আরো মনে করেন, ‘অনেক নির্মাতা কথা বলেন ইংরেজিতে, কিন্তু তাঁরা বানাচ্ছেন হিন্দি ছবি। মূলধারার নির্মাতারা যদি নিজের স্টাইলে ছবি বানান, তাহলে তা নিশ্চয় চলবে। এই দেখুন ‘গাঙ্গুবাই’ ও “ভুল ভুলাইয়া ২” অতিমারির মধ্যেও ভালো ব্যবসা করেছে।’ বলিউডের নির্মাতাদের ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। অনেকেই বাস্তব জীবন নয়, বরং সিনেমা দেখে সিনেমা বানান।

অন্যদিকে বলিউডের অবস্থা এখন মুকুট বিহীন সাম্রাজ্যের মতো। শুধু যে দক্ষিণী সিনেমার দাপটে বলিউডের জৌলুস হারাতে বসেছে তা না অপ্রাসঙ্গিক গল্প, গল্পের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাস্টিং এবং অতি ব্যবসায় সফল সিনেমা বানাতে গিয়ে আজ বলিউড ইন্ডাস্ট্রি খেই হারিয়ে ফেলা অবস্থা। অনেকের মতে, হিন্দি ছবিতে ভালো কনটেন্টের অভাব এবং পাশাপাশি ওটিটির স্বাদ পাওয়ায় মানুষ প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছে না।

এর পাশাপাশি আরো একটা কারণ হলো বলিউডের নিজস্ব কোনো গল্প নেই, নির্মাতারা রিমেকেই বেশি আগ্রহী। যা কি-না বলিউড দর্শকদের মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করছে। সম্প্রতি ‘বিক্রম বেধা’ হিন্দি সিনেমার রিমেইকের ফ্রপই বলে দেয় বলিউডের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বলিউডকে এখন একপ্রকার রিমেইক ইন্ডাস্ট্রি বললেও ভুল হবে না।

বলিউড যদি তার আগের জৌলুস ফিরে পেতে চায় তাহলে পরিবর্তন আনতে হবে গল্পের দিকে। জানতে হবে দর্শক কী চাচ্ছে। তাঁদের রুচি অনুযায়ী ছবি বানাতে হবে। এবং মনোযোগ দিয়ে গল্প গবেষণা করা জরুরি, গল্প অনুযায়ী সিনেমায় কাস্টিং নিবার্চন করা জরুরি, সাথে চিএনাট্যের দিকে । অযথা অতিরঞ্জিত মূলক আইটেম গান বাদ দিয়ে গল্প অনুযায়ী গান বাদ দেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন