সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃজন করে কক্সবাজারের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে প্রধান সড়ক লাগোয়া শুটকি মার্কেটসহ এক একর দশ শতক নাল জমি দেখিয়ে শত কোটি টাকা হাতানোর পায়তারা করছে সংজ্ঞবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। গেল বছর ওই জায়গা দখল-বেদখল ঘিরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদার গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানসহ আরও কয়েকজনকে আসামী করা হয়। এ ঘটনায় অবরোধ ও ভাংচোরে এক সপ্তাহ কক্সবাজার অচল ও উত্তপ্ত ছিল। যা পর্যটনের ওপরে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। চলমান সময়ে আবার জমিটি বিক্রির নামে প্রচারণা চলায় পূর্বের মতো খুনোখুনি ঘটনার পুনারাবৃত্তির আংশকা করছে সংশ্লিষ্টরা।
ওয়ারিশ সূত্রে জায়গার মালিক নুরুল আবছার অভিযোগ করে বলেন, আমার মায়ের কাছ থেকে জায়গাটি কিনেছেন দাবি করছে কক্সবাজারের জালিয়াত চক্রের হোতা হিসেবে পরিচিত আলোচিত আতা উল্লাহ সিদ্দিকী। সেই জায়গা বিক্রির নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ইতোপূর্বে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জালিয়াতির ঘটনায় কারান্তরিণ হবার পর সম্প্রতি জেল থেকে বের হয়ে আবার নতুন করে জায়গাটা বিক্রির নামে বিভিন্ন জনের কাছ হতে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ আমার মা বেঁচে থাকাকালীন আতা উল্লাহসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করেন। সে মামলায় জেল খাটেন প্রতারক আতা উল্লাহ।
ওই জায়গার বিষয়ে আদালতে চলমান একটি জালিয়াতি মামলা সূত্রে (সিআর-৮৪০/১৯- (সদর) জানা যায়, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার কলাতলী এলাকার সংশোধিত সৃজিত বি.এস ২০০৩ নম্বর খতিয়ানের বি.এস ২০০০৩ দাগের আন্দর এক একর ১০ শতক নাল জমির মালিক ছায়েরা খাতুন ওরফে ছারা খাতুন। সেই মতে, হয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক তার ছেলে নুরুল আবছার গংরা।
দালিলিক ডকুমেন্ট তুলে ধরে আতা উল্লাহ জায়গা বিক্রির বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জানিয়ে নুরুল আবছার বলেন, আতা উল্লাহর জাল-জালিয়াতি সম্পর্কে আদালত অবগত হয়েছেন। এরপরই তার প্রতারণার বিষয়ে আদালত রায় ঘোষণা দেন। এ মামলায় তিনি জেল খাটেন। তার প্রতারনা চক্রে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার নানা প্রভাবশালী ব্যক্তিও যুক্ত। পর্যটন এলাকা হওয়ায় জমির মূল্য বাড়ায় তারা আগেও জমিটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা চালায়। ইত্যবসরে আতা উল্লাহ কারাগার চলে গেলে তারা কিছুদিন চুপসে যায়। কিন্তু সম্প্রতি সিন্ডিকেট প্রধান আতা উল্লাহ কারাগার হতে বের হলে চক্রটি আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে। এখন তারা জমিটি বিক্রি করবে প্রচারণা চালিয়ে টাকা হাতানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, তারা আমার মা ও আমাদের কয়েক কোটি টাকা দিয়েছেন দাবি করলেও, কাউকে একটি কানাকড়িও দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আতা উল্লাহ বলেন, আমি জুলুমের স্বীকার হয়েছি।আমি প্রতারণা করিনি- জমির মালিককে সাত কোটি টাকা দিয়েই জমিটি কিনেছিলাম। তবে, একটি পক্ষ আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
সাত কোটি টাকা ‘চেক না ক্যাশে’ কোন মাধ্যমে কিভাবে দিয়েছেন- জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। দায়সারা ভাবে বলেন, দিয়েছি কোন এক ভাবে।
সুগন্ধা এলাকার একটি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ জমি নিয়ে গোলাগুলির ঘটনায় পুরো পর্যটন এলাকায় অস্থিরতা দেখা দেয়। মাঝখানে একটু শীতল ছিল৷ এখন পর্যটন মৌসুম, এ সময় কোন অঘটন ঘটলে আবার স্থিবরতা নেমে আসবে। পর্যটনের স্বার্থে প্রশাসনের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কেউ জানায়নি। অতীত কান্ডের বিষয়টি মাথায় নিয়ে এখানে বিশেষ নজর রাখবে পুলিশ। আদালতের নির্দেশনার বাইরে কেউ কোন চিন্তা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।