জিয়াউল হক ইমন »
বাবা কাঠ মিস্ত্রি। মা কিডনি বিকল হয়ে শুয়ে আছেন ঘরে। বাবা আব্দুল মাবুদের উপার্জনেই চলে সংসার। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এমনই এক হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র মেয়ে সাদিয়া সুলতানা। তার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা তার। তাই দারিদ্র্যতা বাধা হতে পারেনি তার। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
সাদিয়া সুলতানা কাঠমিস্ত্রি আব্দুল মাবুদ ও কুলসুমা বেগমের একমাত্র কন্যা সন্তান। কোন ভর্তি কোচিং ছাড়াই একাডেমিক শিক্ষকদের সহায়তা ও নিজ প্রচেষ্টায় ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন সাদিয়া। পরীক্ষায় ৭৪.৭৫ নম্বর পেয়ে ২৭৪.৭৫ মেরিট স্কোরে মেধা তালিকায় স্থান করে ভর্তির সুযোগ পেলেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে।
তবে এই পথ এতো সহজ ছিল না। এইচএসসিতে গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়ে মেডিকেল ভর্তির জন্য কোচিং করতে চেয়েছিলেন সাদিয়া। কিন্তু অভাবের সংসারে যেখান পড়ালেখার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হয়েছে সেখানে কোচিং করা সম্ভব ছিল না। এতেও থামেনি সাদিয়া। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা নেন শিক্ষকদের। তাঁদের সহযোগিতা ও নিজ প্রচাষ্টায় দেখা মিলেছে মেডিকেল ভর্তির সুযোগের মতো সোনার হরিণ।
ভিডিও দেখতে নিচে ক্লিক করুন…

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার পূর্ব বাকলিয়া ১৮নং ওয়ার্ডের সেকান্দর চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকার মাওলানা রুহুল আমিন সাহেবের বাড়ির কাঠ মিস্ত্রি আব্দুল মাবুদের একমাত্র কন্যা সাদিয়া সুলতানা। ২০০২ সালের ১ অক্টোবর বাকলিয়ায় তার জন্ম। এবার তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে স্থান করে নেন ৩০৪৪তম স্থানে।
সাদিয়া সুলতানা জানালেন তার এই লড়াই সংগ্রামের কথা। বললেন বাবার আপ্রাণ চেষ্টার গল্প, পড়াশোনা খরচ চালাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে পরিবারকে। তবে শিক্ষকরাও আমার পাশে ছিলেন সবসময়। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা ও বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। বাবা কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে সংসার ও আমার পড়াশোনার যোগান দিয়েছেন।
অধ্যম তরুণী সাদিয়া আরও বলেন, ‘স্কুল-কলেজে অধ্যায়নের সময় কখনো পায়ে হেঁটে কখনো অটো টেম্পুতে চড়ে পড়াশুনা চালিয়ে গেছি। পিএসসিতে ভাল রেজাল্ট, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়েছি।’
স্বপ্নবাজ এ তরুণী আরও বলেন, ‘আমার মায়ের একটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। আমি এই কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ হতে চাই, থাকতে চাই কিডনি রোগীদের পাশে। ডাক্তার হয়ে এলাকার হতদরিদ্রদের ফ্রি চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যাব। গরিবের যে কত কষ্ট তা আমি বুঝি, এজন্যই আমি গরিবের ডাক্তার হতে চাই।’
সাদিয়ার বাবা কাঠমিস্ত্রি আব্দুল মাবুদ বলেন, ‘আমার আশা, আমার মেয়ে ডাক্তার হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা যেন বাস্তবায়ন হয়। যাতে ডাক্তার হয়ে এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবা দিতে পারে— সেই দোয়া করি।’
সামনের দিনগুলোতে কৃতিত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কাঠমিস্ত্রি বাবার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে চান সাদিয়া।
মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় অনেক খুশি মেধাবী সাদিয়ার মা, দাদি, জ্যাঠাসহ এলাকাবাসী। সাদিয়ার মতো ইচ্ছা শক্তি ও কঠোর অধ্যাবসায়ে নিজেদের এগিয়ে নিলে স্বপ্ন পূরণ ও লক্ষ্য অর্জনে সম্ভব হবে বলে মনে করছেন শিক্ষক সমাজ।