হিরোপা ইয়াসমিন মনি »
“মা আমাকে অন্তত অনার্স টা শেষ করতে দাও” আকুতি কন্ঠে বলল দিয়া। “ঠিক আছে সারাজীবন পড়তে থাক তুই, আর এদিকে আমরা দুজন মরে যাই, তুই থাক তোর পড়া নিয়ে আমিও বেঁচে থাকলে দেখে নিব পড়ালেখা করে এমনকি উল্টিয়ে ফেলিস।
দিয়া আর শুনতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ওর এসব কথা শুধুমাত্র বিয়ে আগে পড়াশোনা শেষ করতে চাওয়ার জন্যই শুনতে হয়। তার সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছিল যখন তার মা তাকে বলে, “পড়া পড়া করতে থাকলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যা, একটা ম্যাচে গিয়ে সারাদিন পড়িস। আমার চোখের সামনে এসব করিস না।”
“আচ্ছা পড়ালেখা করাটাই কি গুরুতর অপরাধ? নাকি মেয়ে হয়ে স্বপ্ন দেখা বড় অপরাধ? মনে হয় পড়ালেখা শেষ করে তারপর বিয়ে করতে চাওয়াটা অপরাধ? মূলত মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটাই আমার অপরাধ।” একাকী বাথরুমে গিয়ে কান্না করে আর ভাবতে থাকে এসব।
এইতো দু-বছর আগে বাড়ীর মেয়ে রিমার বিয়ে হলো। মেয়েটা দিয়া থেকে তিন বছরের ছোট। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠতেই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় তার পরিবার। ছেলে পক্ষ বিরাট কাপড়ের ব্যবসায়ী। এত যোগ্য পাত্র হাতছাড়া করা যাবে না। রিমা মন থেকে না চাইলেও তার মা-বাবার পীড়াপীড়িতে বিয়েতে রাজি হলো। তারপরেও বলল তাকে যেন বিয়ের পর পড়তে দেওয়া হয়। রিমার বাবা তাকে আশ্বস্ত করলো ছেলে নাকি ওয়াদা করেছে বিয়ের পড় তাকে পড়াবে। ব্যস! রিমা তো মহাখুশি। বিয়ের পর কয়েকমাস স্বামী নিজে তাকে সঙ্গে নিয়ে কলেজেও দিয়ে আসতো।
তারপর আর কি, কিছু সময় না যেতেই রিমার পিছনে সবাই লেগে যায়। বাচ্চা দাও! বাচ্চা দাও! যেন মেয়ে মানুষ মানেই হচ্ছে বাচ্চা পয়দা করার মেশিন। ঘটনা কি ঘটলো, রিমার জীবনের আশা-আকাংখার এখানেই সমাপ্তি। তার অন্তত আর এইচএসসি পাস করা হলো না।
মূলত বিয়ে করতে না চাওয়ার মানে এই না যে সে বিয়েকে ঘৃণা করে। এটাও নয় যে সে কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। আসলে পড়ালেখা শেষ করার আগেই বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ এই যে সে চায় একটু প্রতিষ্ঠিত হতে। নিজের পায়ে দাড়িয়ে বাবা-মা ও পরিবারের জন্য কিছু করতে।
বিয়ে নামক শব্দটা আনন্দের হলেও দিয়ার কাছে সম্পূর্ণ তার বিপরীত। কারণ এই শব্দটা দিয়েই সে জানতে পারে দিন শেষে সবাই স্বার্থপর। বাবা মা চায় কোনো ভাবে মেয়েটাকে কারো ঘাড়ে তুলে দিয়ে নিজেদের উদ্ধার করতে। বড়ভাই-বোন ভাবে এই বুঝি দিয়ার দায়িত্ব আমার কাধে পড়লো। দিয়া নিজেকে “বোঝা” ভাবতে শুরু করে। দুনিয়াটা তার কাছে একটা গোলক ধাঁধা।
মেয়ে মানুষ তো আর গরু নয়, যে সারাদিন হাল চাষের মত ঘরের কাজ করবে আর দিন শেষে জামাই এনে দিলে খাবার খাবে না হয় লাথি ঘুষি খাবে। যে মা জন্ম দিলো সে আজ মেয়ের মনের কথা বুঝে না, যে বাবাকে দিয়া তার নায়ক ভাবতো আজ সেই বাবার কাছে দিয়া একটা ঝামেলার নাম। আত্মহত্যা করতে চাওয়া দিয়ার ভবিষ্যত সে নিজেই এখন অজানা ৷ চলবে…
বাংলাধারা/এফএস/ইরা