বোয়ালখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটেন ৭০ বছরের এই বৃদ্ধা রহিমা বেগম। এরপর তাকে পাঠানো হয় বর্হিবিভাগের ৮ নম্বর কক্ষে। সেখানে যেতে লাইন ধরেন, ওই কক্ষে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পর কক্ষে গিয়ে জানতে পারলেন এখানে চোখের ডাক্তার নেই। অবশেষে চরম হতাশায় বাড়ি ফিরে যান বৃদ্ধা।
রহিমা বেগম বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে ৩ টাকা দিয়ে টিকেট কাটেন। এরপর তাকে পাঠানো হয় বর্হিবিভাগের ৮ নম্বর কক্ষে। সেখানে যেতে লাইন ধরেন তিনি। ওই কক্ষে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। ওই কক্ষের চিকিৎসক চোখের সমস্যা শুনে তাকে চোখের চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দেন।
রহিমা খাতুন চোখের চিকিৎসক কোথায় বসেন— জানতে চাইলে বলা হয়, চোখের চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে হবে। এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসক নেই। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিন ঘণ্টার ধকল সামলিয়ে ৭০ বছরের এই বৃদ্ধা চরম হতাশায় বাড়ি ফিরে যান।
রহিমা খাতুনের সাথে আসেন নাতি আবদুল রশিদ। তিনি চাষের কাজ করেন, দাদিকে হাসপাতালে আনায় কাজে যেতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা কি ধরনের চিকিৎসা দিল বুঝলাম না। বাড়ির সবাই জানতে চেয়েছে— ডাক্তার দেখাতে পেরেছি কি না। করলডেঙ্গা থেকে অটোরিকশায় উপজেলা হাসপাতালে আসতে গাড়ি ভাড়া খরচ হয়ে ৩০০ টাকা।’
জানা গেছে, যেকোনো শারীরিক সমস্যা নিয়ে গেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে টিকিট কাটতে হয়। তবে রোগী বেশি হওয়ায় লাইন দিতে হয়। রোগী মহিলা হলে ৮ নম্বর কক্ষে, পুরুষ হলে ৭ নম্বর কক্ষে এবং শিশু হলে ৯ নম্বর কক্ষে যেতে হয়। এরপর ওই কক্ষগুলোর চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠান।
কয়েকদিন আগে দাঁতের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসা শান্তনু দাস বলেন, ‘সকালে অফিসে যাওয়ার সময় হঠাৎ দাঁতের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ি। উপায় না দেখে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ছুটে যাই। তখন সময় সকাল ১০টা। লাইন ধরে টিকিট কেটে আবারও লাইন ধরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পৌঁছি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডেন্টাল চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন। তখন প্রায় দুপুর ২টা। ডেন্টাল ডাক্তারের কক্ষে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। চিকিৎসক চলে গেছেন।
অথচ যখন হাসপাতালে গিয়েছিলাম তখন ডেন্টাল চিকিৎসক কক্ষে ছিলেন, রোগী ছিল না ওই কক্ষে। তবে টিকিট কাটার পর ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে না পাঠালে উনারা দেখবেন না বলে জানতে পেরেছি। অবশেষে দাঁতের ব্যথা নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে তারা রোলাক নামে দুটো ওষুধ দেন। ব্যথা কমলে নগরে গিয়ে ডেন্টাল সার্জন দেখাতে হয়েছে।’
পূর্ব গোমদণ্ডীর বাসিন্দা সুরাইয়া বেগমের স্বামী আবদুল কাদের বলেন, ‘শুনেছিলাম হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভাল। তাই স্ত্রীকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পরামর্শ নিয়ে আসতে আসতে আর গাইনি বিশেষজ্ঞের কক্ষে যেতে পারিনি।’
ভুক্তভোগিরা জানান, এভাবে চিকিৎসা না দিয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে রোগের লক্ষণ জেনে নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে পাঠালেই হয়ে যায়।
টিকিট কাউন্টারের দায়িত্ব বেলাল হোসেন জানান, সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, রোগীদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এই ওয়ার্ডের চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
দেখা গেছে, নাক-কান-গলা, যৌন ও চর্মরোগ, গাইনি, চোখের, দাঁতের, হৃদ কিংবা হাড়ের সমস্যা নিয়ে আলাদা করে চিকিৎসক দেখানো সুযোগ নেই।
বহির্বিভাগে আসা লোকজন বলেন, এই নিয়মের কারণে বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়েদের কষ্ট হয় বেশি। একানুনে নবজাতক কোলে নিয়ে মায়েদের চাইতে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ক্ষেপণের ফলে সাথে আসা শিশুদের নানা ধরনের বায়না, কান্না আর প্রস্রাব পায়খানাসহ ঝক্কি-ঝামেলায় পড়তে হয়। এতো ভোগান্তির পর যদি কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া না যায় তাহলে তো দুর্ভাগ্যই বলতে হয়। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।