কুবি প্রতিনিধি »
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে ত্রিমুখী বাকবিতণ্ডার পর দুই দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান নিয়েছে। অবস্থানরত শিক্ষকদের দাবি, শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে প্রক্টরের পদ থেকে অপসারণ করা।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে সাড়ে চারটা থেকে এই ঘটনা শুরু হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন তার দপ্তর ছেড়ে চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকাল চারটার সময় উপাচার্য দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নবগঠিত কমিটির সদস্যরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মইনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য আসে। সে সময় উপাচার্য দপ্তর থেকে হট্টগোলের আওয়াজ শুনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। তৎক্ষণাৎ প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
এ ব্যাপারে কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা উপাচার্য দপ্তর থেকে চিল্লাচিল্লি শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। এরপর দেখি শিক্ষকরা উপাচার্যের সাথে চিল্লাচিল্লি করছে। তখন অনেক ছাত্রও জমা হয়। এরপর প্রক্টরিয়াল বডি আমাদের সরিয়ে দেয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অনুপম দাস বাধন বলেন, ‘আমরা কাছাকাছি ছিলাম। এইখানে উচ্চবাচ্য হচ্ছিলো শুনে আমরা আসছি। এসে দেখি ভেতরে উপাচার্য স্যারের সাথে তর্ক হচ্ছে।’
ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন বলেন, ‘আমরা যখন আসি, তখন শুনতে পাই উপাচার্য স্যারের রুমে কয়েকজন শিক্ষক অসদাচরণ করছিলো ও উচ্চস্বরে কথা বলছিলো। আমরা শাখা ছাত্রলীগ সেখানে গেলে কয়েকজন শিক্ষক আমাদের দিকেও তেড়ে আসে। আমরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা চাই না। উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো চলছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কোন দাবি দাওয়া থাকলে সেগুলো নিয়ে উপাচার্য স্যারের সাথে আলোচনা করে সমাধান করুক, বিশৃঙ্খলা না করে নিজেদের মাঝে সমন্বয় করে সমাধান করুক।’
শিক্ষক সমিতির নব-নির্বাচিত কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা নবগঠিত কমিটি মিষ্টি নিয়ে উপাচার্য স্যারের কাছে যাই। সেখানে আলোচনায় আমরা আমাদের ইশতেহারের দাবিগুলোর কথা জানাই কিন্তু তিনি আমাদের কোন পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। উনাকে আমাদের দাবি গুলো শুনার জন্য বার বার বলি। তারপর অছাত্র এসে আমাদের উপর হামলা করে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নব-নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘শিক্ষকদের সাথে এই ধরণের ব্যাবহার কোনভাবেই কাম্য না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হয়েছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই এখনো এই উপাচার্য দপ্তরে অস্থান করছি। তাছাড়া যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রক্টরকে অপশারন না করা হবে ততক্ষন এই অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড আবু তাহের বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। উপাচার্য স্যার আমাদের রেখে উনার বাংলোতে চলে গেছেন। আমাদের আজকের দাবি হলো শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রক্টরের অপশারন করতে হবে। পরবর্তীতে আমরা কী করবো সেটা শিক্ষক সমিতির সকলে বসে সিদ্ধান্ত নিবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘যা ঘটেছে তা সকলের সামনেই ঘটেছে। অগোচরে কিছু ঘটেনি। আমি নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমাকে চার-পাঁচ বার বসিয়েছে। আমাকে টেরোরিস্ট, মিথ্যাবাদী বলেছে। আমি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী পালন করি। আমি বলছি তোমরা শিক্ষক সুলভ আচরণ করো। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয় সবার। একজন আমাকে আক্রমণ করেছে। আমি তাকে সামাল দিতে ব্যস্ত ছিলাম। এখানে আমি কোনো অত্যাচারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে চাই না। আমি অসুস্থতা নিয়ে তো এত চাপ নিতে পারব না।’