আগস্ট অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরে আইন অঙ্গনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। বন্ধ ছিল আদালতের কার্যক্রম। প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের পরে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, উচ্চ আদালতে বেঞ্চ গঠনের পরে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে উচ্চ আদালতের ৩০ জন বিচারপতির পদত্যাগের দাবির ফলে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এ ছাড়া নিম্ন আদালতে সরকারি আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় বিচার কার্যক্রম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, নিম্ন আদালতে দ্রুতই সরকারি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হবে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগের দিন কারফিউ চলাকালে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ও আপিল বিভাগের সব দপ্তর ও শাখা বন্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগ ও দেশের সব অধস্তন আদালত বা ট্রাইব্যুনালের বিচারিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর পরে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ পদত্যাগ করেন। পরে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরে ১৫ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ৫০টি বেঞ্চ গঠন করলে বিচারকার্যক্রম শুরু হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে উচ্চ আদালতে ছুটি চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর ছুটি শেষে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে। এর মধ্যে অবকাশকালীন বেঞ্চে জরুরি কার্যক্রম চলছে।
এরই মধ্যে দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে গতকাল সোমবার দুপুরে ‘সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীবৃন্দ’ ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন তারা। মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, ‘এখান থেকে কমপক্ষে ৩০ জনকে বিদায় নিতে হবে। আইন উপদেষ্টাকে বলি, আপনার কাছে সব নাম আছে। আপনি দয়া করে দুই, তিন-চার দিনের মধ্যে এই এলাকাকে পরিষ্কার করুন ও তাদের বিদায় দেন। বিচারপতিদের বলব, আপনারা দয়া করে পদত্যাগ করুন। আর যদি সেটা না করেন, তাহলে আমরা আপনাদের নামাতে বাধ্য হব। ৫-৬ দিনের মধ্যে না হলে তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর মধ্যে যদি তাদের বিদায় না দিতে পারি, ১৮ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশ করে দেওয়া হবে।
আইনজীবীরা জানান, বিচারপতিদের এমন অপসারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে একপ্রকার অস্বস্তি বিরাজ করছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থায় কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নতুন রেজিস্ট্রার। এরই মধ্যে জুলাই গণহত্যার অর্ধশতাধিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তবে এখনও ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ না দেওয়ায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের পরে নিম্ন আদালতে অনেক কোর্ট সরকারি আইনজীবী পদত্যাগ করেছেন, অনুপস্থিত। এসব আদালতে সরকারি আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় সাক্ষীগ্রহণ থেকে বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে বিচার কার্যক্রম।
এদিকে রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে এই কমিশন গঠন করে গত ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিশন ৩ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করবে এবং সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে।
বাংলাধারা/ফেশি/ঢাকা