তারেক মাহমুদ »
কর্নফূলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মাটি খনন করে রিং বসানোর পাশাপাশি নদীর উভয় পাশে দ্রুত গতিতে চলছে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজও। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে পতেঙ্গার নেভাল অ্যাকাডেমি পয়েন্টে সরেজমিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, টানেলের ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ৩৬০ মিটার অংশের খনন কাজ শেষ হয়েছে। ৩৬০ মিটার অংশে মোট ১৮০টি রিং বসানো হয়েছে। সার্বিকভাবে প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) প্রকল্প মেয়াদের মধ্যেই কাজ সমাপ্ত করতে পারবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য ৩৮১ একর জমির মধ্যে বেশিরভাগ জায়গা অধিগ্রহণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু জমি অধিগ্রহণ বাকি আছে, তাও দ্রুত সমাধান করা হবে।
নকশা অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর নিচে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় দুটি টিউব বসানোর মাধ্যমে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্যের মধ্যে টিউবের দৈর্ঘ্য হবে ২ হাজার ৪৫০ মিটার। প্রতিটি টিউব চওড়ায় হবে ৩৫ ফুট এবং উচ্চতায় প্রায় ১৬ ফুট। টিউব দুটির একটি দিয়ে শহর থেকে গাড়ি প্রবেশ করবে। আরেকটি টিউব দিয়ে ওপারে যাবে। এজন্য কর্ণফুলীর পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজও তৈরি করা হবে। টিউব বসানোর জন্য খনন কাজের পাশাপাশি দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও সমানতালে চলছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের অধীনে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণের পাশাপাশি টানেলের পূর্ব (আনোয়ারা) প্রান্তে ওপেন কাট ২০০ মিটার, কাট অ্যান্ড কভারের ১৯৫ মিটার, অ্যাপ্রোচ রোড ৫৫০ মিটার এবং ২৫ মিটার ওয়ার্কিং শ্যাফট নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে, টানেলের পশ্চিম (পতেঙ্গা) প্রান্তে ওপেন কাট ১৯০ মিটার, কাট অ্যান্ড কভারের ২৩০ মিটার, অ্যাপ্রোচ রোড ৪ হাজার ৭৯৮ দশমিক ০৯৫ মিটার এবং ২৫ মিটার ওয়ার্কিং শ্যাফট নির্মাণ করা হবে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী টানেলের খনন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি টানেল প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেলটি পতেঙ্গার নেভাল অ্যাকাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপারে গিয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায়। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্পে ঋণ হিসেবে চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার অর্থায়ন করছে। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ টানেল নির্মাণের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে, কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম শহরকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে। একভাগে রয়েছে নগর ও বন্দর এবং অপরভাগে রয়েছে ভারী শিল্প এলাকা। কর্ণফুলী নদীর ওপর ইতোমধ্যে তিনটি সেতু নির্মিত হয়েছে, যা বিরাজমান প্রচুর পরিমাণ যানবাহনের জন্য যথেষ্ট নয়। নদীর মরফলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমা একটি বড় সমস্যা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারীতার জন্য বড় হুমকি। এই পলি জমা সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর আর কোন সেতু নির্মাণ না করে এর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ জন্য সরকার চট্টগ্রাম জেলার দুই অংশকে সংযুক্ত করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর/টিএম
