লামা প্রতিনিধি »
পালাক্রমে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল বান্দরবানের আলীকদমের উপজাতি প্রতিবন্ধী তরুনী লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) কে। ঘটনা ধামাচাপা ও বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে ধর্ষকরা পরিকল্পিকভাবে মেয়েটিকে হত্যার পরে গলায় গামছা বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে দেয়।
হত্যা ঘটনার ৬ মাস পর জড়িত ৩ ধর্ষক ত্রিমথীয় ত্রিপুরা (২৫), জয়কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮) ও জন ত্রিপুরা (৪৩) কে গ্রেফতার করলে তারা চাঞ্চল্যকর এইসব তথ্য আদালতে স্বীকার করে। নিহত লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যা আলীকদম সদর ইউনিয়নের জলন্তমনি পাড়ার (আশ্রয় কেন্দ্র) কিত্তমন তঞ্চঙ্গ্যা মেয়ে। আসামীরা সকলে একই এলাকার অধিবাসী।
শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে মামলার অগ্রগতি নিয়ে প্রেস বিফ্রিং করেন আলীকদম থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিক উল্লাহ। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, আলীকদম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী অফিসার কানন চৌধুরী, পুলিশের উপ-পরিদর্শক নুর ইসলাম।
ওসি রফিক উল্লাহ জানান, গত ২৫ নভেম্বর ২০১৮ রোববার বিকাল ৩টায় আলীকদমের আমতলী অসতি ত্রিপুরা পাড়ার পাশে জনমানবহীন পাহাড়ের ঢালে তরুনীর লাশ গাছে ঝুলতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। তৎক্ষণাত আলীকদম থানার এসআই স্বপন বড়ুয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিলার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এবিষয়ে ২৫ নভেম্বর ২০১৮ইং আলীকদম থানায় নিহতের বোনের ছেলে ক্যানুমং তঞ্চঙ্গ্যা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।
তিনি বলেন, লাশ পাওয়ার পর গ্রামবাসী বিষয়টি আত্মহত্যা বলে লাশের শেষকার্য্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশের কাছে প্রাথমিক আলামত মতে বিষয়টি সন্দেহ লাগায় স্থানীয়দের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে জানা যায়, লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যাকে যৌন নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। উক্ত ঘটনায় ধর্ষণ করে হত্যা সংক্রান্ত অজ্ঞাতনামা আসামী করে আলীকদম থানায় মামলা রুজু করা হয়। মামলার তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কানন চৌধুরীকে দেয়া হয়। তদন্তভার গ্রহণ করে তিনি বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন।
ওসি রফিক বলেন, অবশেষে দীর্ঘ ছয়মাস পরে মূল রহস্য উদঘাটন করে মামলার ঘটনায় জড়িত আসামী থিমথীয় ত্রিপুরা, জয়কুমার তংচংগ্যা ও জন ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করা হয়। আসামী তিনজন ভিকটিমকে গণ-ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা ও লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখার বিষয় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়েছে। ঘটনাটি ছিল একটি লোমহষর্ক ও জঘন্য। যার কোন ক্লু বা তথ্য প্রমাণ ছিলনা। পুলিশ তদন্তকালে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। আসামী ৩জন জেল হাজতে রয়েছে।
এদিকে লোমহষর্ক ঘটনা প্রকৃত আসামীরা গ্রেফতার হওয়ায় এবং মূল রহস্য উদঘাটন করায় আলীকদম থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর ২০১৯ইং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার আমতলী অসতি ত্রিপুরা পাড়ার পাশে লাকাচিং তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) নামে এক প্রতিবন্ধী তঞ্চঙ্গ্যা তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তরুনীর স্বজনরা জানায়, ওই তরুনী পিতাহারা ও প্রতিবন্ধী। ভিক্ষা করেই জীবন যাপন করছিল সে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর