ksrm-ads

১২ জুন ২০২৫

ksrm-ads

ধর্ষণ মামলার বিচারে হাইকোর্টের ৭ দফা নির্দেশনা

বাংলাধারা ডেস্ক ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলার বিচার করতে নিম্ন আদালতের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর, সাক্ষী, পুলিশ, চিকিৎসক বা মামলার অন্যান্য বিশেষজ্ঞের প্রতি সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আলাদা তিনটি আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনা এক. দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসমূহে বিচারাধীন ধর্ষণ এবং ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনের সঠিক সময়সীমার (বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৮০ দিন) ছয় মাসের মধ্যে যাতে বিচারকাজ শেষ করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

দুই. ট্রাইব্যুনালগুলোকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (২০) ধারা ২০ এর বিধান অনুযায়ী মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে।

তিন. ধার্য্য তারিখে সাক্ষী উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে প্রতি জেলায় অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কাজ সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন। যে সমস্ত জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সে সমস্ত জেলায় সকল ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরগণ মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হবেন এবং তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

চার. ধার্য্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সঙ্গত কারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে।

পাঁচ. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের উপর দ্রুততম সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়েও মনিটরিং করবেন।

ছয়. ধার্য্য তারিখে সমন পাওয়ার পরও অফিসিয়াল সাক্ষীরা যেমন-ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হলে, ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশের বিষয় বিবেচনা করবেন।

সাত. আদালতের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, সরকার অতি স্বল্প সময়ে উক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবেন।

এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই আদেশের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেলকে দেওয়া হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আলাদা তিনটি আবেদনের শুনানি বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারাধীন মামলার আসামি মো. রাহেল ওরফে রায়হান গত বছরের ২৮ জুন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষনের ঘটনায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন ছাত্রীর বাবা।

এ ঘটনায় তদন্ত শেষে পুলিশ ২ সেটেম্বর অভিযোগপত্র দেয়। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ গঠন না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে জামিন চাইলে গত ১ জুলাই তার জামিন আবেদনটি খারিজ হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট জামিন আবেদন করেন আসামি, যেটি নামঞ্জুর হয়েছে।

এছাড়া ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর নোয়াখালীতে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন এক নারী। এই মামলায় আসামি. সারোয়ার রুবেল ও এমরানকে গত বছরের ২৯ মে এক বছরের জন্য জামিন দেয়। এই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নোয়াখালীর নারী শিশু নিরআতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ গত ৩ জুলাই তাকে কারাগারে পাঠায়। এই আদেশের বিরুদ্ধে জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন আসামি। হাইকোর্ট আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেছে বলে জানায় তাদের আইনজীবী মার্জিয়া জামান।

এদিকে, গত বছর ১৭ মার্চ ঢাকার শনির আখরায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে। ২০ মার্চ শিশুটির মা বাদী হয়ে ডেমরা থানায় মামলা করেন। আসামি সেকেন্দার আলীকে অসামি করে। এ মামলায় অভিযোগ গঠন না হওয়া ২৪ জুন তার জামিন আবেদন খারিজ হলে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট জামিন আবেদন করেন। সে আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে বলে জানান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর/এসবি/আরইউ

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ