১২ জুলাই ২০২৫

নতুন বছরে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম, বন্ধ হতে পারে ভুর্তকিও

আন্তর্জাতিক বাজারের দরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। ভুর্তকি সরে আসতে চায় সরকার। এজন্য প্রতি তিন মাস পর দেশের বাজারে ডিজেল, অকটেন, পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। নতুন বছরের যে কোনো সময় দাম  সমন্বয়ের ঘোষণা আসতে পারে।

গত সপ্তাহে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তারা জানান, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। বর্তমানে দেশে যে পদ্ধতিতে এলপিজির (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে অনেকটা সে পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের মূল্যহার নির্ধারণে একটি মডেল বা কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। তবে এলপিজির মূল্যহার প্রতি মাসে নির্ধারণ করা হলেও জ্বালানি তেলের দাম তিন মাস পরপর নির্ধারণের চিন্তা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, তেলের দাম নির্ধারণে নতুন উপায় নিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্তমানে এলপিজির দাম প্রতি মাসে সমন্বয় করা হচ্ছে। তেলের দামও এভাবে সমন্বয় করা যায় কি না, সে চেষ্টা করছি। সরকার জ্বালানি তেলে আর ভর্তুকি দিতে চায় না।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করছে। শুনানির মাধ্যমে আমদানিকারকদের খরচ ও কমিশন চূড়ান্ত করা হয়। এখন প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দুই উপাদান প্রোপেন ও বিউটেনের দাম যতটুকু ওঠানামা করে ততটুকুর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে যে মাসে দাম বাড়ে বা কমে তার পরের মাসে দেশে এ গ্যাসের দাম বাড়ে বা কমে।
ডিজেল পেট্রোলের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অনুসরণের কথা ভাবা হচ্ছে। পরিচালন খরচ, পরিবহন খরচ ও আমদানি ব্যয় আলাদা করা হবে। পরিচালন ও পরিবহন খরচ অপরিবর্তিত থাকবে বা দীর্ঘমেয়াদি হবে। আর প্রতি তিন মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারের দরের সঙ্গে দেশের জ্বালানি তেলের বাজার দর নির্ধারণ করা হবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতদিন আমাদের অর্থ ছিল, আমরা ভর্তুকি দিয়েছি। কিন্তু করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিয়েছে তাতে আমরাও আক্রান্ত। সুতরাং বিদ্যুৎ এবং জ্বালানিতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে তা বেশিদিন দেওয়া সম্ভব হবে না।

এদিকে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে সরকার জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিচ্ছে না। বরং রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছে। পাশাপাশি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়েছে। এখন হয়তো প্রতি মাসে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। কিন্তু সুশাসন ও দুর্নীতি দূর করা গেলে এ লোকসান হতো না। তারা আরো বলেন, জ্বালানি পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কর-মূসক আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার মধ্যে ৩৪ টাকাই কর নেওয়া হচ্ছে। জ্বালানি তেলে সরকার যে পরিমাণ ভর্তুকি আগে দিত কর-মূসক বাবদ তার চেয়ে বেশি আদায় করেছে। আবার বর্তমানেও যে হারে ও পরিমাণে কর-মূসক আদায় করছে ভর্তুকি দিতে হলেও তা আদায়কৃত কর-মূসকের চেয়ে কম হবে।

বিদ্যমান পদ্ধতিতে তেলের দাম বেড়ে গেলে ভ্যাট-ট্যাক্সের পরিমাণও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে দামের পরিবর্তে পণ্যের পরিমাপের ওপর কর-মূসক নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে আসছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তারা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে যেন সে হারে কর-মূসকের পরিমাণও না বাড়ে নতুন মূল্য কাঠামোতে তা নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব রয়েছে।

বর্তমানে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। একক পাইকারি বিক্রেতা হচ্ছে বিপিসি। তারা নিজেরা আমদানি করছে পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া উপজাত (কনডেনসেট) থেকে পাওয়া পেট্রোল, অকটেন বিতরণ কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে বাজারজাত করছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেদের ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করে থাকে।

আরও পড়ুন