ksrm-ads

১৬ জানুয়ারি ২০২৫

ksrm-ads

সপ্তাহ ধরে স্বাভাবিক যোগাযোগ বন্ধে সেন্টমার্টিনে খাদ্যসংকটের শঙ্কা

নাফনদে নৌযান দেখলেই গুলি করছে মিয়ানমার!

https://bangladhara.com/%e0%a6%8f%e0%a6%96%e0%a6%a8%e0%a7%8b-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b9%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%95/

কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে গত একসপ্তাহ ধরে স্বাভাবিক ভাবে কোনো নৌ-যান সেন্টমার্টিন যাতায়াত করতে পারছে না। ৫ জুন সেন্টমার্টিনে ভোটগ্রহণ শেষে টেকনাফ ফেরার পথে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বহন করা ট্রলারে মিয়ানমারের উপকূল হতে গুলি চালানো হয়। এরপর হতে নাফনদ হয়ে সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়ায় থাকা বোটে অহেতুক গুলি করা হলেও মিয়ানমার অভ্যন্তরে সংঘাত চলমান থাকায় কারা গুলি করছে তা নির্ণয় করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ মঙ্গলবার এক রোগীসহ সাধারণ সেন্টমার্টিনবাসী মিলে স্পীড বোটে যাবার কালে গুলির শিকার হয়।

ভয়ে, কোন ধরনের নৌযান টেকনাফ-সেন্টমার্টিন যাতায়াত করছে না। ফলে, এক ধরণের ‘বন্দিজীবন’ কাটাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অধিবাসীরা। নাফ নদীতে বাংলাদেশি নৌযান দেখলেই মিয়ানমার উপকূল হতে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়ায় এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তাই দেশের স্থলভাগের সাথে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য সংকট তীব্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

চেয়ারম্যান জানান, গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) হতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের নৌযান চলাচল বন্ধ। ফলে দিনে দিনে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল ও তেলের চরম সংকট চলছে। এগুলো এক-দুদিন পর পর স্থল টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন আনা হলো। কিন্তু গত সাতদিন ধরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে কোনো ধরনের খাদ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এখনো চালের সংকট পড়েনি, তরকারিহীন শুকনো ভাত খাওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। এ নিয়ে দ্বীপবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

চেয়ারম্যান মুজিব বলেন, বুধবার পর্যন্ত টানা সাতদিন ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। এরই মধ্যে কেউ কেউ সাহস করে টেকনাফ ঘাট থেকে নৌযান ছেড়ে দেয় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। নাফ নদীর মাঝামাঝি অংশে (বাংলাদেশ সীমান্ত) নৌযান লক্ষ্য করে ওপার থেকে মুহুর্মুহু গুলি এসে পড়ছে পানিতে। এ অবস্থায় নৌযান আবার ঘুরিয়ে নিয়ে নিরাপদে ভিড়ছে টেকনাফ ঘাটে। চলমান পরিস্থিতিতে আমরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছি।

ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে সেন্টমার্টিনের চেয়ারম্যান মুজিব আরো বলেন, মঙ্গলবার (১১ জুন) টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদী পেরিয়ে সাগরের ঘোলচর এলাকায় স্পিডবোটকে নৌযান নিয়ে ধাওয়া করে গুলি করেছে মিয়ানমারের সৈন্যরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এর মধ্যে তিন দফা গুলির ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমারের প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের বোটগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। গত ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে ফেরার পথে নির্বাচন কর্মকর্তা ও ৮ জুন সেন্টমার্টিনে ইট-বালু ও খাদ্যসামগ্রী বহনকারী ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির একটি বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, প্রথম যেদিন এই ঘটনা ঘটে, সেদিনই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আজকের (মঙ্গলবারের) ঘটনার পর কূটনৈতিক চ্যানেলে আবারও প্রতিবাদ জানাব। তবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে না, সেটা তো আমরা বুঝতেই পারছি। ওই এলাকা এখন কাদের নিয়ন্ত্রণে সেটিও পরিষ্কার নয়। তবে আমাদের কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত আছে।ল

মঙ্গলবার গুলির মুখে পড়া স্পিডবোটটির মালিক সৈয়দ আলম বলেন, আগের গুলির ঘটনার পর গত পাঁচ দিন আমরা নদীতে যাইনি। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে স্পিডবোটে রোগী যাত্রী তুলে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। আগে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, কারা গুলি ছুড়ছে। কিন্তু যখন ছোট ছোট নৌযান নিয়ে আমাদের স্পিডবোটে গুলি করা হয়, তখন সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাহাজ ছিল। ফলে আমরা ধারণা করছি জান্তার সৈন্যরাই এটা করছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরীর বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পিডবোট-ট্রলারে গুলির ঘটনায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আপত্কালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট চালু করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমি নিজে নৌযানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দুই দিন আগে কক্সবাজারের ডিসি অফিসেও বৈঠক হয়েছে। আমরা নৌযান মালিকদের ডেকে বলেছি, বিকল্প রুট দিয়ে আপাতত খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, সংকট হওয়ার আগে সংকট চলছে বলে প্রচার করে বাড়তি দাম আদায় করতে কোন অসাধু ব্যবসায়ী প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে থাকতে পারে। দ্বীপে সংকট এড়াতে দ্রুতই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।

অপর এক সূত্রমতে, উপকূলীয় জলসীমায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে কোস্ট গার্ড। বিষয়টি নিয়ে কোস্টগার্ড সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছে। এ নিয়ে কোস্টগার্ড কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিজিবির সেক্টর পর্যায়ে তথ্য আদান প্রদান করেছে। সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন