আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মিরসাইয়ের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ পরিবারের সাথে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের সম্পর্ক সাপে-নেউলে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের ঘনিষ্টতা মিরসরাইয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথে নগদ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের হাস্যোজ্বল ছবি মুক্তির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামীগের নেতাকর্মীদের মাঝে নানামুখী আলোচনার ঝড় থামতে না থামতেই একটি মাদরাসা কমিটিতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জ্যেষ্ঠপুত্র সাবেদুর রহমান সমুকে সভাপতি ও এলিটকে সম্পাদক হতে দেখা যায়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বলয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করা নেতাকর্মীরা মোশাররফ পরিবারের সাথে এলিটের ঘনিষ্টতাকে রাজনৈতিক সুবাতাস বলে দেখলেও দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে বঞ্চিত হওয়া নেতারা বিষয়টিকে দেখছেন নেতিবাচক হিসেবে। বিষয়টিকে ঘিরে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন সংস্কারপন্থী রাজনৈতিক কর্মীরাও।
আজ রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে মিরসরাই উপজেলার হাদীফকির হাট এলাকার মসজিদিয়া ইউনুছিয়া ইসলামিয়া নয়দুয়ারীয়া মাদরাসা ও এতিমখানার কার্যকরী কমিটির অনুমোদন দেওয়ার পর সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সারা নেট দুনিয়ায়, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে চায়ের কাপে।
এর আগে নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের সাথে এলিটের একটি হাস্যোজ্বল ছবি মুক্তি পেলে তা নিয়েও উঠে নানা প্রশ্ন, আলোচনা-সমালোচনা। এলিট ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আজ প্রিয় অভিভাবকের সান্নিধ্যে’। এতে করে মিরসরাই আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের মাঝে একদিকে আনন্দ উল্লাস দেখা দিয়েছে। এটিকে রাজনৈতিক সৌন্দর্য হিসেবে দেখাছেন অনেকে, আর কেউ জানাচ্ছেন অভিনন্দন। অন্যদিকে এমন দৃশ্যে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মাঝে।
মোশাররফ পরিবারের সদস্যের সাথে এলিটের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি সামনে আসায় এলিটের এতোদিনের শুভাকাঙ্খীরা ফেলছেন হাতাশার নিঃশ্বাস। কেউ বলছেন, এটা দেখার পর নিজের চোখটারে বেঈমান মনে হচ্ছে, আবার কেউ দু’জনের এই হাসিকে বলছেন, ‘মিথ্যা হাসি’। কেউ বলছেন এটি কেমনে সম্ভব? এতদিন সাধারণ কর্মীদের কেন বলিরপাঠা বানালেন?
অপরদিকে বিষয়টিকে স্বাভাবিক ও রাজনৈতিক সৌন্দর্য বলে দেখছেন আওয়ামীলীগের একাংশ। তাদের মতে, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ মিরসরাই আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক। তার সান্নিধ্য পেতে সবাই চায়। ঝড়ঝাপ্টায় বটগাছের নিচেই আশ্রয় মেলে। বিষয়টিকে আবার অনেকে দেখছেন রাজনীতির সুবাতাস হিসেবে। তাদের মতে, সৌহার্দ্য ও আনুগত্যের এমন ধারা অব্যাহত থাকলে মিরসরাইতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান ঘটবে।
এ বিষয়ে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, সাবেদুর রহমান সমুর সাথে আমার রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরে পারিবারিক একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। সে সুবাধে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় আছে। আমার বাবা মাদরাসাটির ওয়াকফ মোতোয়াল্লি। তিনি সমু ভাইকে সভাপতি ও আমাকে সম্পাদক নিয়োগ করেন। জেলা প্রশাসন সে কমিটি অনুমোদন দেন।
মোশাররফ পরিবারের সাথে দুরত্ব মিটলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই উপজেলায় রাজনীতি করতে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথে আমার একটি তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে আমারা দুজনেরই মনে হয়েছে যে বৃহত্তর স্বার্থে একসাথে রাজনীতি করা উচিত। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা বসেছি, ঐক্যমতে আসছি। আমাদের মূল টার্গেট মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা। সুখে দুখে মানুষের পাশে থাকা।
এ বিষয়ে সাবেদুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় পারিবারিক কারণে তিনি দেশের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
সাম্পতিক সময়ে এলিটের সাথে সম্পর্ক নিয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে খোলামেলা কিছু বলতে রাজি হননি। সাক্ষাতে উনার সাথে কথা বলতে বলেন এ বর্ষীয়ান নেতা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় নির্বাচনে নিয়াজ মোর্শেদ মোর্শেদ এলিট আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শোনা গেলেও নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় বিদ্রোহী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সাথে গণসংযোগ করে ব্যাপক পরিচিতি পান নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর বেশ কিছুদিন তাকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় দেখা গেলেও হঠাৎ করে বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সাথে হাস্যোজ্জ্বল ছবি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে এ নেতাকে। সর্বশেষ আজ গঠিত হওয়া একটি মাদরাসা কমিটির সভাপতি যেখানে ইঞ্জিনিয়ার মোশারফের জ্যেষ্ঠপুত্র সাবেদুর রহমান সমু সে একই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হন নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। যা নতুন করে আলোচনার নিভু প্রদীপে ঘিয়ের যোগান দেয়।