ড. আজাদ বুলবুল »
আজকাল খেটেখুটে লিখবার ধৈর্য্য লেখক গবেষকদের থাকে না। হাতের কাছে গুগল আছে, কাট পেস্টের দরোজা খোলা আছে সুতরাং খাটাখাটুনির দরকারটা কী? মাঠে ঘাটে হেঁটে, প্রান্তজনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে লোকশ্রুতি যোগাড়ের কাজটা তো বোকারাই করবে। তাদের আবিষ্কৃত মণিমুক্তারাজি কোনো অখ্যাত প্রকাশকের হাত দিয়ে সস্তা কাগজে ছাপার ভুলসহ প্রকাশিত হলে লোকসাহিত্যের কথিত পণ্ডিতগণ নাক সিঁটকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলবেন- এ আর এমন কী! কোথাকার কোন গেঁয়ো মোড়ল, লোকসংস্কৃতি লিখতে এলেন! এ বিষয়ে বলবার এক্তিয়ার আছে তার? তারপর- এটা হয়নি, ওটা আসেনি, এভাবে হয়না, ফোকলোর সংগ্রহের নিয়ম মানা হয়নি, কতোগুলো জিনিস স্তুপকৃত হয়েছে মাত্র; এমনি নানান কথা।
এই যখন অবস্থা তখন একজন ম পানা উল্যাহ অনেক খাটাখাটুনি করে, অনেক শ্রম-ঘাম ঝরিয়ে আমাদের উপহার দিলেন ‘বৃহত্তর নোয়াখালীর লোকসংস্কৃতি’। এ যেন প্রান্তিক সাহিত্যের মণিময় অলংকার। এ যেন নোয়াখালীর লোকজীবনের হিরন্ময় স্বাক্ষর, চিরন্তন ভাষারূপের অনালোকিত অধ্যায়।
ইতোপূর্বে নোয়াখালীর লোক সংস্কৃতি নিয়ে ড. সিরাজ উদ্দিনের রচনাকে ঠিক স্থানিক সাহিত্য বলা যায় না। ভিন্ন অঞ্চলের লোকছড়া, ধাধাঁ, প্রবাদ-প্রবচনকে নোয়াখালীকরণের মাধ্যমে যে চাতুর্য করা হয়েছে তা বুঝতে পাঠকদের অসুবিধা হয়নি। অবশ্য ড. খালেদ মাসুকে রসুলের গবেষণা ও সংগ্রহ যথার্থ বস্তুনিষ্ঠ।
এক্ষেত্রে পানা উল্যার কাজও মাটিলগ্ন এবং মৌলিক। তাঁর বিশিষ্টতা হচ্ছে তিনি বহুল প্রচলিত ও মুদ্রিত উদাহরণের বাইরে গিয়ে এক নতুন জগতের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটিয়েছেন। ভাবতে অবাক লাগে নোয়াখালীর লোকসংস্কৃতি ধারণকরা মানুষগুলোকে তিনি কোথায় পেয়েছেন?
আমাদের ধারণা ছিলো লোকজীবনে চর্চিত, ব্যবহৃত ও সংরক্ষিত এই ফোকলোর হয়তো হারিয়ে গেছে। কিন্তু নাহ। একজন পানা উল্যাহ অসীম ধৈর্য্যের সাথে, মাননীয় দক্ষতায় এই শ্রমসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করলেন। যে হাত দিয়ে তিনি এই মুক্তারাজি আমাদের উপহার দিলেন, সেই হাতটি সোনায় মুড়িয়ে দেয়া উচিত হতো। কিন্তু আমরা কী সঠিক জিনিসের সঠিক মূল্যায়ণ করি? রাষ্ট্র আমাদের সেই সুযোগ রাখেনি, বিধাতাও সেই সুযোগ দেয়নি। আফসোস!
দ্রষ্টব্য : ৫০০/টাকা মূল্যের বইটি সরাসরি পেতে রকমারি ডট কম এ যোগাযোগ করুন।
বাংলাধারা/এআই