পটিয়া প্রতিনিধি »
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার জিয়া উদ্দিন মুহাম্মদ সাকিবের ওপর হামলার এবং বেধড়ক পিটুনির অভিযোগে মানববনদ্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মৃত ঘোষণা করার অভিযোগ এনে ওই চিকিৎসককে পেটানো হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে সরকারি পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারধরের ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার জিয়া উদ্দিন মুহাম্মদ সাকিব জানিয়েছেন, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে উপজেলার বরলিয়া গ্রাম থেকে পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া দেড় বছরের এক শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তখন হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে জিয়া এবং ডাক্তার হিসেবে সূচিতা দেবী দায়িত্বরত ছিলেন। শিশুটিকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে ইসিজি করানো হয়।
‘দেখা যায়, শিশুটি আগেই মারা গেছে। মৃতদেহ হস্তান্তরের পর স্বজনরা বাড়িতে চলে যান।পৌনে ১২টার দিকে তারা আবার শিশুটির মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাদের অভিযোগ, বাড়িতে নেওয়ার পর শিশুটি হাত-পা নাড়াচাড়া করেছে। হাসপাতালে ঢুকেই তারা প্রথমে ইমার্জেন্সি এটেনডেন্টকে চড়-থাপ্পড় দেয়। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসক আমাকে গিয়ে বিষয়টি জানান। আমি দ্রুত বের হয়ে শিশুটির বাবাকে আমার কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে ওনাকে শান্তভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, হাত-পা নাড়ানোর বিষয়টি রাইগড় মোটিভ বা মৃত্যুর পর মাংসপেশির খিঁচুনি থেকে হতে পারে। বাস্তবে শিশুটি মৃত।’
তিনি আরো জানান, আমি যখন শিশুটির বাবাকে বোঝাচ্ছিলাম, হঠাৎ করে ৬-৭ জন লোক সেখানে ঢুকে গালিগালাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমার হাত থেকে নিয়ে ইসিজি রিপোর্ট ছিঁড়ে আমাকে মারধর শুরু করেন। তাদের হামলায় আমি পড়ে যাই। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের আমার কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যান। মারধরে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। আমি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছি।
এ ঘটনার পর জিয়া উদ্দিন বাদী হয়ে দু’জনের নাম উল্লেখ করে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিনহাজ মাহমুদ জানান, ‘মামলার এজাহার জমা দিয়েছেন চিকিৎসক। এজাহারে দুই জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান।
তিনি বলেন, মৃতদেহে পেশির সংকোচন দেখে তারা শিশুটি বেঁচে আছে দাবি করে ডাক্তারের ওপর হামলা করে। মৃত্যু পরবর্তী ২ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে পেশির সংকোচন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এরপরও চিকিৎসককে দায়ী করে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা কাম্য নয়। এতে চিকিৎসকদের স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাধারা/এফএস/এএ