পটিয়া প্রতিনিধি »
কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পটিয়ায় জমতে শুরু করেছে পশুর হাট। ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়লেও বিক্রেতাদের অভিযোগ, গরুর আমদানির মাত্রায় কেনাবেচা তুলনামূলক কম। আবার ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। অনেক ক্রেতা দাম কমার অপেক্ষায় আছেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে পটিয়ায় বেশির ভাগ পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় গরুর পরিবর্তে এবার দেশীয় জাতের গরু বাজার দখলে রেখেছে। এর মধ্যে বাড়িতে পালন করা নেপালি জাতের শাইওয়াল জাতের গরুও বাজারে উঠেছে। এজন্য এবছর গরুর দাম কমার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলেও জানান অনেক বিক্রেতা ও ক্রেতা।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি আর রোদ উপেক্ষা করেই গরু নিয়ে দাড়িয়ে আছে বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা মাথায় ছাতা নিয়ে গরুর দরদাম করছে। প্রতিটি বাজারেই প্রায় দুই হাজার থেকে তিন হাজার গরু বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। প্রতিটি গরু বিক্রির পর হাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা ইজারাদারকে দিতে হচ্ছে। আবার কোন কোন হাটে প্রতি গরু বা মহিষে ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করতে দেখা গেছে।
চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর থেকে কমলমুন্সির হাটে গরু নিয়ে এসেছেন আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘আমি দেশি জাতের একটি গরু এনেছি। দাম চাচ্ছি ১ লাখ ৪০ হাজার। কিন্তু ক্রেতারা দাম কম বলায় এখনো গরু বিক্রি করতে পারিনি।
কচুয়াই থেকে আকবর হোসেন গরু বিক্রি করতে এসে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কম। ৭০ হাজার টাকার গরু ৬০ হাজার টাকা দাম করছে।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, গতবারের তুলনায় এবার প্রতিটি গরুর দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। ৮৫ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন সেলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি কোরবানির জন্য ৮৫ হাজার টাকা দামের গরু কিনলাম। তবে গতবার এই গরু ৭০ থেকে ৭৫ হাজারের মধ্যেই ছিল। এবার একটু দাম বেশি।
পটিয়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার উপজেলার ১০ টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসেছে। প্রতিটি বাজারে পশুকে দেখভাল করার জন্য ১০ টির অধিক মেডিকেল টিম কাজ করছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে পটিয়া নতুন থানার হাট, কমলমুন্সির রেলবাজার হাট, শান্তির হাট, মুন্সির হাট, মনসা বাদামতল এর মনসা চৌমুহনী হাট, অলির হাট, মহাজন হাট, মুরালিঘাট বাজার,রৌশন হাট, পটিয়া পুরাতন থানা হাটসহ আরো কয়েকটি হাটে।
এছাড়া ও উপজেলার পাড়ায় মহল্লায় এবার মৌসুমি পশু ব্যাবসায়ীরা গরু, মহিষ ও ছাগল কিনে এনে যার যার এলাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেখান হতে ও পশু কিনতে ক্রেতারা দলে দলে ছুঠতে চোখে পড়ছে।
পটিয়া বাইপাস সড়ক হতে মহিষ কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে কথা হয় আনোয়ার আলম নামে একজন ক্রেতার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, আমি এসেছি আশিয়া হতে এখান হতে মহিষ কিনলে দাম একটু সুবিধা পাওয়া যায়। তাই এসে সুবিধা মতো স্বাচ্ছন্দ্যে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
পটিয়া প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুব্রত সরকার বলেন, উপজেলার ১০ টি স্থানে ঈদ উপলক্ষ্যে পশুর হাট বসেছে। প্রতিটি স্হানে পশুর হাট দেখভাল করার জন্য আমাদের ভেটেরিনারি টিম কাজ করছেন। আমরা বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখেছি, এবার ভারতীয় গরু কোন হাটেই তেমন চোখে পড়েনি। এ জন্য দেশীয় গরুর খামারি ও মালিকেরা এবার ভালো দাম পাবে বলেও জানান তিনি। সব মিলিয়ে বেশ জমে উঠেছে পটিয়ায় কোরবানীর পশুর হাট।
এদিকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা দিতে পটিয়া থানা পুলিশের একটি বিশেষ দল পশুর হাটে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছেন। পুলিশের দলটি জাল টাকায় যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয় সে জন্য জাল টাকা সনাক্ত করতে মেশিন নিয়ে বসেছেন। পুলিশের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক গুলো জাল টাকা সনাক্তকরনের জন্য বুথ খুলেছে। পশুর হাটে রোগ র্নিনয় করতে পটিয়া প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরের একটি দল পশু হাটে পরীক্ষা -নিরিক্ষা করে ক্রেতাদের সহায়তা করে যাচ্ছেন।
পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের পুলিশের একটি বিশেষ চৌকস টিম উপজেলার পশুর হাট গুলোতে বিশেষ ব্যাবস্থায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে। আশা করি শেষ পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তা দিয়ে বিশেষ ভুমিকা পালন করবে।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর