কাউছার আলম, পটিয়া »
পটিয়ার বড়লিয়া জঙ্গলখাইনসহ একাদিক স্থানে রাতের আঁধারে চাষাবাদের জমি থেকে ‘টপ সয়েল’ কাটছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। তবে ‘টপ সয়েল’ কাটার সবচেয়ে বেশি তান্ডব চলছে উপজেলার হাইদগাঁও, কচুয়াই, মুজাফরাবাদ, খরনা ও বড়লিয়া জঙ্গলখাইন এলাকায় ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এতোদিন দিনের বেলায় চুরি করে ‘টপ সয়েল’ কাটা হতো। বিষয়টি হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর নজরে এলে তা বন্ধে কঠোর নির্দেশ দেন। এসব বন্ধে কঠোর হওয়ায় হুইপ চট্টগ্রাম এবং দেশের বাইরে গেলে ‘টপ সয়েল’ কাটার মহোৎসব চলতো। এখন কৌশল পাল্টে টপ সয়েল কাটা চলছে রাতের বেলায়। তাতে থানা পুলিশের কোন কোন অফিসারের আঁতাত রয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, পটিয়ার বড়লিয়া মোহাম্মদ ইসমাইল,জঙ্গলখাইনের ইউসুপ সিন্ডিকেট এর প্রধান হোতা। ‘টপ সয়েল’ কাটার বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারণে কিছুদিন টপ সয়েল কাটা বন্ধ থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে রাতের বেলায় কাটা হচ্ছে টপ সয়েল।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, সবশেষ গত বুধবার রাতে উপজেলার কচুয়াই কালা মসজিদ এলাকায়, মুজাফ্ফরাবাদের পশ্চিম দিকে স্টিল ব্রিজ এলাকায়, হাইদগাঁওয়ের কাট্টলীপাড়া এলাকায় এবং বড়লিয়া এলাকায় টপ সয়েল কাটার মহোৎসব চলে।
স্থানীয়রা আরো জানান, অধিকাংশ সিন্ডিকেট টপ সয়েল কাটার কাজে ব্যবহার করছে এস্বেটর। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষাবাদের জমি থেকে উর্বর মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে। উর্বর মাটি বিক্রির ফলে জমি ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, তাদের বাধ্য করে সিন্ডিকেট স্বল্প দাম দিয়ে ‘টপ সয়েল’ কেটে নিচ্ছে। আর এসব জমি এমনভাবে গর্ত করা হচ্ছে যাতে পার্শ্ববর্তী জমিতে পানি ধারণের সুযোগ না থাকে এবং চাষাবাদ ব্যাহত হয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকও সিন্ডিকেটের কাছে তার জমির ‘টপ সয়েল’ তুলে দিতে বাধ্য হন।
আরো জানা যায়, সিন্ডিকেট ‘টপ সয়েল’ কাটাকে আইনগত বৈধতা দিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসি ল্যান্ড ও পটিয়া থানা ওসির কাছে একটি আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয় চাষাবাদের জন্য জমির উঁচু নিচু অবস্থান সমান করা হবে। কিন্তু কোন মাটি পরিবহন বা অন্যত্র নেয়া হবে না। এভাবে কৌশলে বিভিন্ন সময় অনুমতি হাতিয়ে নেয়ার পর মাটি বিক্রির ঘটনা ঘটে।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান বাংলাধারাকে বলেন, ‘টপ সয়েল’ কাটা বন্ধে প্রশাসন খুবই আন্তরিক। হুইপ এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। রাতের বেলায়ও যদি সঠিক তথ্য পাওয়া যায় তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন বাংলাধারাকে বলেন, রাতে তিনি বিষয়টি জানার পর এক অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গাড়িগুলো পালিয়ে গেছে বলে তাকে জানানো হয়। ওই অফিসার গাড়ি ও স্কেবেটর মাটি কাটা অবস্থায় পেয়েছেন, এরপরও তিনি আটক করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে কোন অফিসার নয়, তিনি নিজেই অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন।
এরপর ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, মাঠি কাটার সময় কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এ ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। এসময় তারা আরো জানান, ‘টপ সয়েল’ কাটার কারণে আমাদের ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি প্রতি বছর কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী বছর থেকে আর চাষাবাদ করতে হবে না। এব্যাপারে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাধারা/এফএস/এমআর