ksrm-ads

২৭ এপ্রিল ২০২৫

ksrm-ads

পরিবেশের তদন্তে নির্দোষ ব্যক্তিই পাহাড় কাটা মামলায় প্রধান আসামি!

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »

কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে সরকারি পাহাড় কেটে মাটি ও বালু বিক্রির অভিযোগে করা পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় আসামি নিয়ে চরম বিতর্ক চলছে। পাহাড় কাটার ঘটনায় নাম আসা ২৩ অভিযুক্তের বিষয়ে তদন্তে নির্দোষ বলে প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ করা ব্যক্তিকেই মামলাতে প্রধান আসামি করায় পরিবেশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা চলছে। মামলায় এলাকার বাইরে অবস্থান করা আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২০ জনকে আসামি করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

তিনি বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় গত ২৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাতে মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৬ আগস্ট পিএমখালীতে সরকারি পাহাড় কেটে বালু ব্যবসার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালকের নির্দেশে ৮ আগস্ট দুপুরে পিএমখালীর পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিবেশ ও বন বিভাগের একটি যৌথ দল। ওই দলের সদস্যরা পিএমখালীর ছনখোলা এলাকার তাজমহলের ঘোনা, ঘোনারপাড়া, তেইল্যাকাটা, পশ্চিমপাড়া নামক স্থানে পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখতে পান। পাহাড়গুলোর চারদিকে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ঘরবাড়ি রয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হুদা বলেন, নথিভুক্ত মামলাটি তদন্ত করবেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে- পিএমখালী পরানিয়াপাড়ার ওবাইদুল করিম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মাহমুদুল করিম মাদু এবং নয়াপাড়ার বাসিন্দা ও পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের, জেলা পরিষদের সদস্য মাদুর বড় ভাই মামুন, ছনখোলার জাহাঙ্গীর আলম, তোতকখালীর জোসেফ, তোতকখালীর সাবেক ইউপি সদস্য তাজমহল ও কায়েস সিকদার, দক্ষিণ খুনিয়াপালংয়ের নুরুল কবির বাবুল, ঘোনারপাড়ার লুৎফর রহমান ও সোনা আলী, পরানিয়াপাড়ার কাজল ও মনিরুল ইসলাম, খুরুশকুল লামাজিপাড়ার নাছির উদ্দিন, উত্তর পরানিয়াপাড়ার মো. সোহেল, তোতকখালীর সিরাজ ও শাহজাহান, নয়াপাড়ার হারুন, ডিকপাড়ার মোস্তাক আহমদ ও নুরুল আমিন। আসামিদের সবার ডাম্পার (মিনি ট্রাক) রয়েছে। সকলেই বালু ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু পাহাড় কাটার বিষয়ে তদন্তের পর পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম ও পরিদর্শক মুসাইব ইবনে রহমান স্বাক্ষরিত এবং অত্র কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান কর্তৃক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালকের কাছে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগে অভিযুক্ত ২৩ জনের মাঝে ওবাইদুল করিমসহ চারজন পাহাড়টি কাটায় জড়িত নেই বলে উল্লেখ করা হয়।

স্থানীয় মেম্বার, সমাজকর্মী, সচেতন অধিবাসী, বন বিভাগের রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তার সাক্ষে সিকদার গ্রুপের ১৯ জনের সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে। ওবাইদসহ বাকি চারজন বাইরের লোক হওয়ায় তারা সংশ্লিষ্ট পাহাড় কাটা, মাটি ও বালু বিক্রিতে জড়িত নেই বলে স্পষ্ট করা হয়। ব্যাখ্যায় বলা হয়, সাবেক মেম্বার তাজমহলের নিয়ন্ত্রণাধীন সিকদার গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাইরে কারো ডাম্পার এসে মাটি-বালু নিতে পারে না। তাই ওবাইদুল করিম ও অন্যরা সিকদার গ্রুপ কর্তৃক কাটা পাহাড়ে যাননি।

প্রতিবেদন জমার পর থেকে সাক্ষের বিষয়টি এড়িয়ে ওবাইদসহ চারজনকে অভিযোগ থেকে রহস্যজনক ভাবে বাদ দেয়ার কথা উল্লেখ করে জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করান অভিযোগকারিরা।

এরপরই বাদ যাওয়া চারজনের মাঝে তিনজনকে রেখে আগের বনমামলা থাকার কথা বলে ওবাইদুল করিমকে প্রধান অভিযুক্ত করে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অথচ বাদ দেয়া তিনজনের নামেও আদালতে চলমান একাধিক বন মামলা বিদ্যমান। এ তথ্য প্রচার পাবার পর পরিবেশের মামলাটি নিয়ে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে।

মামলার প্রধান আসামি ওবাইদুল করিম বলেন, ওই এলাকায় কাদের প্রতিপত্তি সেটা তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট। সেখানে আমার মতো নিরহ একজন যে যেতেই পারবে না, সেই বাস্তবতা পুঙ্খানোপুঙ্খ বিবরণে রয়েছে। কিন্তু এরপরও কথিত পরিবেশবাদিদের মনরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর আমাকে মিথ্যাভাবে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে। ক্ষমতার চেয়ারে থাকা ব্যক্তিরা নিরহ মানুষকে চাইলেই অপরাধী বানাতে পারেন, এটা তারই উদাহরণ। ওপরওয়ালা এর সঠিক বিচার করবেন। আমার গাড়ি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মালামাল ও ইট পরিবহনে চলে-সেটা তদন্ত করলে যে কেউ সত্যতা পাবেন। আমি পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত নয়।

আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল করিম বলেন, আমি কক্সবাজার শহরে থাকি কয়েক যুগ আগে থেকেই। শুধু ওই এলাকায় বাবার বাড়ি হওয়ায় সামাজিকভাবে হেয় করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কথায় পরিবেশ অধিদপ্তর আমায় আসামি করেছে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। পাশাপাশি এটি আইনগতভাবে মোকাবিলা করবো।

মামলার বাদী সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভাগীয় পরিচালক মহোদয় কর্তৃক নির্দেশিত হয়েই ২০ জনের নামে মামলাটি করা হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট মামলার পনঃতদন্তে বাদ যাওয়া চার জনের মাঝে একজনকে কেন মামলায় যুক্ত করা হয়েছে তা পরিচালক মহোদয় ভালো জানবেন।

সূত্র মতে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র গত এক বছর ধরে কয়েক একর আয়তনের সরকারি একাধিক পাহাড় কেটেছে। এখান থেকে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট বালু ও মাটি বিক্রি করেছে তারা। এসব মাটি ও বালু বিক্রি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। প্রায় সময় মামলা হলেও পাহাড়খেকোরা প্রভাবশালী ও এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় পাহাড় কাটা বন্ধ করা যায়নি।

পরিবেশের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, মামলায় কারো প্ররোচনায় কাউকে আসামি করা হয়নি। এরপরও ঘটনায় জড়িত না থাকা প্রমাণ করতে পারলে সেসব অভিযুক্তদের বাদ দেয়া হবে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, প্রভাবশালী দুর্বৃত্ত কর্তৃক কেটে ফেলা সেই পাহাড়ে নতুন করে বনায়ন করেছে বন বিভাগ। নিয়মিত তদারকি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় পাহাড়নিধন ও বালুর ব্যবসা বন্ধ করা গেছে।

আরও পড়ুন