আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান »
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলার বান্দরবান। এ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনা হয়। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাহাড় অশান্ত থাকায় পর্যটক শূন্য জেলাটি। ফলে ট্যুরিস্ট গাইড, পরিবহনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট জড়িত ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছে। পর্যটন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শহরের বিভিন্ন মার্কেট।
সম্প্রতি রুমা ও রোয়াংছড়ির বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে যৌথ বাহিনী। এ জন্য গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় রুমা-রোয়াংছড়িতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এবং ২৩ অক্টোবর থেকে থানচি ও আলীকদমে এলাকায় ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল দ্বিতীয় দফায় ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চার উপজেলায় পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন জেলা প্রশাসন।
তবে, লামা-নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো উন্মুক্ত রয়েছে। তবে অধিকাংশ এলাকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় সেখানে যেতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন পর্যটকরা। এতে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
হোটেল হিলটন ও হোটেল হিলভিউ ম্যানেজার মো. উমর ফারুক ও আক্কাস উদ্দীন সিদ্দিকী জানান, পর্যটকেরা টানা কয়েক দিনের জন্য রুম বুকিং নিয়েছিল। অনেকেই দুই একদিন থেকে ফিরে যাচ্ছেন। যারা আগাম বুকিং নিয়েছিল তারা বুকিং বাতিল করে দেওয়ায় তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
জিপ গাড়ি চালক কাঞ্চয় জয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, গত আট দিনে একটিও ভাড়া পাইনি। স্টেশনে অলস সময় কাটছে। পরিবার নিয়ে কিভাবে চলব সেটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
হিলভিউ হোটেলের বার্মিজ দোকানে বিক্রেতা য়ইসে রাখাইন বলেন, পর্যটক না থাকাতে আমাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে নাহ। পর্যটক মৌসুমে যদি পর্যটকরা না থাকে তাহলে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হবে।
বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস চালক সমিতির লাইনম্যান মো. কামাল জানান, সপ্তাহ খানেক আগেও যেখানে দৈনিক ১৭০টি পর্যটকবাহী জিপ স্টেশন ছেড়ে যেত, সেখানে বর্তমানে দৈনিক মাত্র ১৫টি গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে।
বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস চালক সমিতির সভাপতি মো.জাফর ইকবাল জানান, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসী বিরোধী অভিযান পরিচালনা কারার কারণে পর্যটকবাহী গাড়ি রুমা-রোয়াংছড়ি, থানচি-আলীকদম এলাকায় না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশনার না দেয়া পর্যটন গাড়ি চলাচলের অব্যাহত রাখার হয়েছে।
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, বান্দরবানে রুমা-রোয়াংছড়ি, থানছি-আলীকদম উপজেলায় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে স্থানীয় প্রশাসন। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা জানায়নি প্রশাসন। এতে পর্যটকের উপস্থিতি খুবই কমে গেছে।অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে এক বা দুটি কক্ষ বুকিং আছে।যা দিয়ে হোটেল পরিচালনা খরচ বহন করা অসম্ভব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আর কর্মচারীদেরও বিদায় জানাতে হবে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি জানান, যৌথবাহিনী সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায়। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে রুমা-রোয়াংছড়ি-থানছি-আলীকদম এলাকায় পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এনির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে জানান তিনি।