নতুন পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
এসময় সুদীপ্ত চাকমার সভাপতিত্বে ও সুভাষ চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি উসাচিং মারমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের সভাপতি বিলাস ত্রিপুরা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাইনুমং মারমা।
অন্বেষ চাকমা বলেন, ‘উগ্র মৌলবাদী সেটেলারদের আপত্তিতে এনসিটিবি কর্তৃক আদিবাসী শব্দ বাতিলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই গ্রাফিতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলে মিথ্যাচার করে তারা আসলে জুলাই অভ্যুত্থান ও অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন বাংলাদেশের চেতনাকে ধারণ করে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসেও আজ আমাদের ভূমি অধিকারের দাবি, আমাদের অস্তিত্বের দাবি নিয়ে কথা বলতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের এবং এনসিটিবি কর্তৃক আদিবাসী শব্দ পূনর্বহাল করার দাবি জানাই।’
উসাচিং মারমা বলেন, ‘আমরা আদিবাসীরা এদেশের নাগরিক। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বাদ দিয়ে এই রাষ্ট্র পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারে না। এনসিটিবি কর্তৃক পাঠ্য পুস্তক থেকে আদিবাসী প্রচ্ছদ বাতিলের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী নই আমরা সম্পৃক্ততাবাদী। সকলের নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে সুষ্ঠু ও অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক।’
বিলাস ত্রিপুরা বলেন, ‘আদিবাসী শব্দকে এত ভয় কেন? পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরাও এদেশের নাগরিক। গুটিকয়েক কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতিবাদে এনসিটিবি কর্তৃক আদিবাসী গ্রাফিতি বাতিল একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের পরিচায়ক হতে পারে না। অনতিবিলম্বে আদিবাসী গ্রাফিতি পুনর্বহাল রেখে সকল জাতিসমূহ মিলে একটি সম্পৃক্ত ও সুষ্ঠু নাগরিক মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের দাবি জানাই।’
সাইনুমং মারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণকারী সেটেলারদের আপত্তিতে পাঠ্যপুস্তক বই থেকে আদিবাসী শব্দ বাতিলের জন্য তীব্র নিন্দা জানাই। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় তা এখানে পুরোপুরি ব্যর্থ। নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক বই থেকে বাতিল করা আদিবাসী প্রচ্ছদ পুনর্বহাল রাখার দাবি জানাই।’
সভাপতির বক্তব্যে সুদীপ্ত চাকমা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য যে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ছিল তা আজ পুরোপুরি ব্যর্থ। বাংলাদেশের সব সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের দাবিকে বারেবার উপেক্ষা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অধিকারকে যথোপযুক্তভাবে সম্পৃক্ত করে এই রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। এনসিটিবি কর্তৃক পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী শব্দ পুনর্বহাল করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক সমস্যাকে সমাধানের লক্ষ্যে যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তা পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।’