কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারে আবারও ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভোর রাত ৩টা হতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টায় কক্সবাজারে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ভারী বর্ষণের তোড়ে পুরো পর্যটন শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতে। বৃষ্টির তীব্রতায় পাহাড় ধ্বসে নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পৃথক এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
নিহতরা হলেন, শহরের ৬নং ওয়ার্ডের এবিসি ঘোনার দক্ষিণ পল্লানিয়াকাটা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা বেগম (৩০) ও ৭নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকার সাইফুলের ছেলে নাজমুল হাসান (৬)।
মেয়র মাবু স্থানীয়দের বরাতে জানান, বুধবার রাতে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তবে, রাত ৩টা থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষন। প্রায় ৪ ঘন্টা চলে এ বৃষ্টি। টানা বর্ষণে পর্যটন জোনসহ পৌরসভার প্রায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনাও। সকাল ৭টার মাঝারি আকারে রূপ নেয় বৃষ্টি।
নিহত জমিলার স্বামী করিমের বরাতে স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর বলেন, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পল্লানিয়াকাটায় নিজেদের বসতঘরে ঘুম হতে উঠে সবাই নাস্তার আয়োজন করছিলেন। এসময় আচমকা পাহাড়ের মাটি বসত ঘরে পড়লে চাপা পড়ে গৃহবধূ জমিলা। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকায় বাড়ির মাটির দেয়াল চাপায় নাজমুল হাসান মারা যায়। পাহাড় ধসে ঘরের মাটির দেয়ালসহ আসবাবপত্র শিশু হাসানের গায়ে পড়ে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বক্তব্য জানতে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর টিপুকে বার বার ফোন দেয়া হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মুহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, মাটিচাপায় জখম পাওয়া দুজনের মাঝে শিশু নাজমুলকে সকাল পৌনে ৮টা ও নারী জমিলাকে পৌনে নয়টায় হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তারা মারা যান। দেয়াল চাপায় শিশু নাজমুলের মাথা থেঁতলে যায়। মরদেহ মর্গে রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ চলছে। বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টা হতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মাঝে ৩টা হতে ৬টা পর্যন্ত ৮৫ মিমি আর ৬টা হতে ৯টা পর্যন্ত ৯৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
পর্যটন জোনের ব্যবসায়ী ওবায়দুল হোসেন ও মুহাম্মদ আয়াছ জানান, কয়েক ঘন্টার টানা বৃষ্টিতে কলাতলীর পর্যটন জোনের প্রধান সড়কসহ উপসড়কগুলো হাটু পানিতে তলিয়ে যায়। পানি ঢুকেছে অনেক দোকান, অফিস ও বাসায়।
টেকপাড়ার বাসিন্দা আজিজ রাসেল জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে পুরো টেকপাড়া, চাউলবাজার, বড় বাজার, পেশকারপাড়ার আশপাশ প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করছে হাটু পরিমাণ পানি। পানি চলছে শহরের প্রধান সড়কের উপর দিয়েও। নালার উপর স্থাপণা করায় পানি চলাচল পথ সংকোচিত করায় নিষ্কাশনে বাধা পেয়ে পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। এতে দামি আসবাবসহ বাড়ির সকল কিছু পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অধিবাসীরা।
পানিবন্দি হয়ে আছে লাইটহাউজ এলাকার বাসাবাড়ির লোকজনও, এমনটি জানিয়েছেন পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত সোহেল আরমানসহ অনেকে।
কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আলমগীর জানান, পাহাড় ধ্বসে দুজন মারাযাবার কথা শুনেছি কিন্তু ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। বৃষ্টির তোড়ে ফাঁড়ি ভবনের নিচতলা তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে অফিসকক্ষসহ প্রয়োজনীয় সকল স্থানে। ডুবে রয়েছে রাস্তাঘাট।