ksrm-ads

১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ksrm-ads

পুরোদমে সচল চট্টগ্রাম বন্দর, খুলেছে কারখানা

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত, প্রাণহানি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কারফিউ ঘোষণার চার দিন পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

সরকারি-বেসরকারি অফিস, পোশাকসহ শিল্প-কলকারখানা, দোকানপাট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিনে উপস্থিতি ছিল প্রচুর। ইন্টারনেট চালু হওয়ায় পাঁচদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসে আমদানি-রফতানি পণ্যের শুল্কায়ন সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে। ফলে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনও বেড়েছে।

আতঙ্ক কাটিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করেছে। কারফিউ শিথিলের মধ্যে কর্মস্থল খোলার প্রথমদিনে রীতিমতো মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সড়কে দিনভর যানবাহনের চাপ ছিল প্রচুর। কোথাও, কোথাও যানজটও দেখা গেছে। তবে বিকেল পাঁচটায় ফের কারফিউ বলবৎ করার পর সড়ক আবারও ফাঁকা হয়ে গেছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে সংঘাতের কারণে গত ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। আগের রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সংযোগ।

কারফিউ ঘোষণার আগে ১৬ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত চারদিন চট্টগ্রাম নগরীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোট ছয় জন নিহত হন। এর মধ্যে একজন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) জেলা প্রশাসন এবং নগর পুলিশ চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করে। এর মধ্য দিয়ে আতঙ্ক কাটিয়ে লোকজন বেরিয়ে আসতে শুরু করে। শিথিলের সময়ে নগরীর পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক দেখা গেছে। এ সময় রাস্তায় প্রচুর যানবাহনও দেখা গেছে। নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে।

বুধবার এবং বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) প্রতিদিন মহানগরী ও জেলায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রাখার ঘোষণা দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘কারফিউ ঘোষণার পর থেকে জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার বিরুদ্ধে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে।’

এদিকে, তিন দিন পর মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় কিছু কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়। শিল্প পুলিশের হিসেবে মঙ্গলবার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কলকারখানা খোলা ছিল, যার মধ্যে অধিকাংশই পোশাক কারখানা। তবে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে কারখানাগুলো বন্ধ ছিল।

বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে সরকারিভাবে সকল অফিস-আদালত, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে কারফিউ শিথিল করে খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘ইপিজেডের ভেতরে এবং বাইরে অলমোস্ট সব কারখানা খোলা ছিল। ইপিজেডের বাইরে প্রায় সাড়ে চারশ পোশাক কারখানা আছে। আমাদের মনিটরিং টিম প্রায় সব কারখানাই খোলা পেয়েছে। কারখানায় শ্রমিকের উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৮৭ থেকে ৯০ শতাংশ। কারফিউর মধ্যে কেউ কেউ হয়তো গ্রামগঞ্জে চলে যাওয়ায় সঠিক সময়ে ফিরতে পারেননি। নাশকতা মোকাবিলায় আমাদের সাড়ে চারশ পুলিশ শিল্পাঞ্চলে মোতায়েন ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমরা পাইনি।’

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইপিজেডসহ মিলিয়ে আমাদের ছয়শর মতো পোশাক কারখানা আছে। সবগুলোই আজ চালু ছিল। দুয়েকটি তাদের অভ্যন্তরীণ কারণে বন্ধ থাকলে থাকতে পারে। আমাদের হিসেবে শ্রমিক উপস্থিতির হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। আমরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেল করেছি। বলা যেতে পারে, পোশাক খাতে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে।’

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জও টানা পাঁচদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে কিছুটা সচল হয়ে উঠেছে। বুধবার সকাল থেকে পণ্য নিয়ে ট্রাক বাজারে ঢুকতে দেখা গেছে। আবার বিভিন্নস্থান থেকে আসা ক্রেতাদেরও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভিড় করতে দেখা গেছে। প্রায় সব আড়ত ও দোকান খোলা ছিল।

এদিকে, মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাত থেকে চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। এর ফলে পাঁচদিন পর কাস্টমস অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, যে পদ্ধতিতে তারা আমদানি-রফতানি পণ্যের শুল্কায়ন সম্পন্ন করে। তবে ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে বুধবারও দিনভর শুল্কায়নের গতি শ্লথ ছিল বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইন্টারনেট না থাকায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শুল্কায়ন, বন্দরের আমদানি-রফতানি পণ্যের ডকুমেন্টেশন, পণ্যের ঘোষণা অনুযায়ী ইনস্পেকশন, কনটেইনার রাখার স্থান নির্ধারণ, ডিউটি আদায়সহ সব কার্যক্রম টানা পাঁচদিন স্থবির ছিল। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বন্দরের কার্যক্রম সীমিতভাবে সচল রাখা হলেও শুল্কায়ন নথি না পৌঁছায় পণ্য ডেলিভারি ও জাহাজীকরণ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া, সংঘাত ও কারফিউর কারণে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বড়ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ১৮ জুলাই রাতে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত কাস্টমস যেসব পণ্যের শুল্কায়ন সম্পন্ন করে, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে সেগুলোর খালাস এবং জাহাজীকরণ সম্পন্ন হয়। এরপর দুইদিন ধরে কার্যত কনটেইনার আর বন্দরের বাইরে যেতে পারেনি। ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ জমলেও জাহাজ নোঙ্গর এবং আমদানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার খালাস বন্ধ রাখেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

কারফিউর মধ্যে ২১ ও ২২ জুলাই দুই দিনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোনো কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি। ২২ জুলাই মাত্র ৪১৫ টিইইউস কনটেইনার বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পৌঁছে। তবে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) ৬৫ টিইইউস কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ড থেকে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ডেলিভারি নেন। আর বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে যায় ১১০ টিইইউস কনটেইনার।

সচিব জানিয়েছেন, ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস কনটেনার রাখার সক্ষমতার মধ্যে ২৪ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার আছে প্রায় ৪০ হাজার টিইইউস।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ