দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু, বোয়ালখালী »
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বোরো আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার ৪০ একর জমিতে সিড সোয়িং মেশিন ব্যবহার করে সিডলিং ‘ট্রে’তে প্রথমবারের মতো উপশী জাতের ধানের বীজ বপন করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলা পূর্ব আমুচিয়ার স্থানীয় কৃষকেরা এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে এসব চারা সমলয় পদ্ধতিতে জমিতে রোপণ করবেন। এতে শ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে এবং ফলনও ৩০-৪০ শতাংশ বাড়বে বলে আশাবাদী স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে আমুচিয়ায় ইউনিয়নের বগাচরা বিলের ৪০ একর জমিতে বোরো আবাদের জন্য ‘ট্রে’ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা ৬০জন কৃষক তাদের জমিতে রোপণ করবেন। সে লক্ষ্যে বীজতলা তৈরিতে তাদের সময় লেগেছে মাত্র দুইদিন। উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকরা বীজতলা তৈরিতে সহযোগিতা করছেন।
আগামী ২০-২২ দিনের মধ্যে এ বীজতলায় উৎপাদিত চারা লাগানোর উপযোগি হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ।
তিনি বলেন, উৎপাদিত চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে জমিতে রোপণ করা হবে। মেশিনের মাধ্যমে ঘণ্টায় ৪০ শতক জমিতে চারা রোপণ করা যাবে। সেই হিসেবে ৪০ একর জমিতে চারা রোপণের জন্য ১০-১২ দিন সময় লাগবে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ, সময় ও শ্রম সাশ্রয়ী হবে।
কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় আমুচিয়া ইউনিয়নের বগাচরা বিলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বোরো আবাদ করা হচ্ছে। এতে ৬০ জন কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তারা একমত হয়ে বোরো আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। তাদের থেকে কয়েকজন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা পালা করে সিড সোয়িং মেশিন ব্যবহার করে ‘ট্রে’তে বীজতলা তৈরি করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ৪০ একর জমিতে রোপণের জন্য ২ হাজার ট্রেতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেতে ১৩০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম ধানের বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের ২০ থেকে ২২ দিনপর ধানের চারাগুলো মাদুরের মতো করে তোলা হয়। এরপর চারা রোপণ যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে জমিতে রোপণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে একজন কৃষক ঘণ্টায় ৪০ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন। ট্রে পদ্ধতিতে চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ দ্রুত বাড়ে।
আমুচিয়া ইউনিয়নের কৃষক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘মেশিনের মাধ্যমে আগে কখনো ধান চাষ করিনি। এবারই প্রথম এ পদ্ধতিতে ১২ একর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এরই মধ্যে ট্রেতে বীজ বপন করে ফেলেছি। এ বছর যদি ফলন ভালো হয় তাহলে প্রতিবছরই এ পদ্ধতিতে ধানের চাষাবাদ করবো।’
একই এলাকার কৃষক অমিয় বড়ুয়া, নজরুল ইসলাম, অভি বড়ুয়া, রুপন দে, বিভূতি বড়ুয়া, জয়ন্ত বড়ুয়াসহ অনেকেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বীজতলা তৈরি করেছেন।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল আলম ও সৌমিত্র দে বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতির চেয়ে এই পদ্ধতিতে ধান চাষে ফলন বাড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ বপনে ৩:২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণের পানি দিয়ে ভিজিয়ে সমতল জায়গায় রাখা হয়। বীজতলা তৈরির তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়। ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে কৃষক ভালো মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফসল ফলাতে পারেন।’