সায়ীদ আলমগীর »
দু’দিনের টানা বর্ষণে উজান থেকে নামা মৌসুমের প্রথম পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার সদরের ২নং পোকখালী ও ৪নং জালালাবাদ ইউনিয়ন’র সংযোগ সেতুর মাঝের পিলারসহ দুটি গার্ডার স্প্যান। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) জালালাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব ফরাজী পাড়া মনজুর মৌলভীর দোকান ও পূর্ব পোকখালী এলাকার সংযোগ সেতুটি অকস্মাৎ বিধ্বস্ত হয়। ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর উপর এ সেতু দিয়ে দুই ইউনিয়নের ১৫-২০ গ্রামসহ ব্যবসায়ীক ও চাষাবাদে যেতে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ শর্টকাটে নিয়মিত যাতায়াত করতো। সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদী পারাপারে দু’ইউনিয়নের সহজ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ও ব্রীজ এলাকার ইউপি সদস্য ওসমান সরোয়ার ডিপো জানান, গত দুদিন ধরে টানা বর্ষণ চলছে। বুধবার দুপুর থেকে মৌসুমের প্রথম ঢল নেমেছে ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীতে। মাঝারি মানের স্রোতের তোড়েই জালালাবাদ মনজুর মৌলভীর দোকান এলাকার দু’ইউনিয়নের সংযোগ ব্রীজটি বৃহস্পতিবার সকালে মাঝের পিলারটি দুটি গার্ডার স্প্যানসহ তলিয়ে গেছে। এসময় ব্রীজ পারাপাররত ৮-১০জন পথচারিও নদীতে পড়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরে তারা সাঁতরে কুলে উঠে এসেছে।
প্যানেল চেয়ারম্যান ডিপো আরো বলেন, তার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদের পরিবারের সদস্যদের কারণে ব্রীজটি তলিয়ে গিয়ে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, গত বছর ব্রীজটির পশ্চিমে বাঁধটি ভেঙ্গে অর্ধশতাধিক বাড়ি, সড়ক, পুকুর ও নানা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন মেরামতে প্রায় ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায় তাদের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাকে কাজটি নিয়ে নেন চেয়ারম্যান রাশেদ। ভাঙ্গন বাঁধতে ব্রীজের মাঝের পিলারে কাছাকাছি এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলে। এতে ব্রীজের ক্ষতি হতে পারে বলে স্থানীয়রা নিষেধ করলেও তিনি (চেয়ারম্যান) কর্ণপাত না করায় ততকালীন ইউএনওকে অভিযোগ করা হয়। এরপর দিনের বেলায় একটু দূরে ড্রেজার নিয়ে যাওয়া হলেও রাতে ঠিকই ব্রীজের কিনার থেকেই বালু তোলা হয়েছে।
এছাড়াও চেয়ারম্যানের দু’সহোদর একই স্থানে একই কায়দায় ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলে স্থানীয় দুটি ইট ভাটায় বিক্রি করেছে। সেসময়ও নিষেধ করা হলেও তারা চেয়ারম্যানের ক্ষমতায় কারো নিষেধ তোয়াক্কা করেনি। এলাকায় এসে বিষয়টি জানতে চাইলে সবাই হাত তোলা স্বীকারোক্তি দিবে।
স্থানীয় মনসুর আলম নামে এক যুবক বলেন, ২০০৬-০৭ সালের দিকে স্থানীয়দের নানা তদবিরে বাড়ীর অদুরে গার্ডার ব্রীজটি নির্মাণ হবার পর হতে দু’পারের লোকজনের যাতায়াত পথ অনেকাংশ কমে আসে এবং সময়ও বাঁচতো। কিন্তু আজ আকস্মিক কমস্রোতে বন্যার তোড়ে সেতুর মধ্যবর্তী দুটি গার্ডার স্প্যান ও একটি পিলার ভেঙ্গে নদীতে পড়ে ব্রীজটি স্মৃতি হয়ে গেল। সুষ্ক মৌসুমে নির্বিচারে বালু তোলা চেয়ারম্যানরা তিন ভাইয়ের লোভের কু-ফল আজ ভোগ করলো ব্রীজ এলাকার আশপাশ ও নিয়মিত যাতায়তকারি লাখো মানুষ।
সেতু ভেঙে যাবার পাশাপাশি পূর্ব ফরাজী পাড়া মঞ্জুর মৌলভী দোকান সংলগ্ন বাঁধ ও আশপাশের আরো কিছু জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে এলাকাবাসী জানান, চেয়ারম্যানের বাড়ি ঈদগাঁও বাজারের কাছাকাছি দূর্যোগ মুক্ত এলাকায়। তিনি নদী পাড়ের মানুষের কষ্ট অনুধাবন করতে পারেন না। তাই পূর্বের ভাঙ্গনটিও উপ-কন্ট্রাকে যেনতেন ভাবে মেরামত করেছিলেন চেয়ারম্যান। সেটিও আরেকটু বেগে ঢল নামলে তলিয়ে যাবার সম্ভবনা বেশি। এ কারণে এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদের দুর্যোগ মোকাবেলায় মানসিক এবং শারীরিক ভাবে প্রস্তুত থাকার অনুরোধ করছি আমরা।
পোকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রফিক বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঢলের পানির তোড়ে সেতুর মধ্যবর্তী দুটি গার্ডার স্প্যান ও একটি পিলার ভেঙে নদীতে তলিয়ে গেছে। এ সময় সেতু পার হতে গিয়ে ৮-১০ জন পথচারীও নদীতে পড়ে গিয়ে সামান্য আহত হন।সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় পোকখালী ও জালালাবাদসহ অন্যান্য এলাকার প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা দূর্ভোগে পড়েছে। ব্রিজটি দ্রুত পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
সেতু ভেঙ্গে তলিয়ে যাওয়া ও বালু তোলার বিষয়ে জানতে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার সদরের এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ব্রীজের নিকটবর্তী এলাকা থেকে বালু তোলার অভিযোগ পেয়ে আমরা তখনও অভিযান করেছিলাম। এখন ব্রীজটি ভেঙ্গে যাবার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর