বাংলাধারা প্রতিবেদক »
টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকিহ বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে ২৭ জুলাই। সোমবার (১৮ জুলাই) দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ রায়ের এই তারিখ ঠিক করে দেন। আসামিপক্ষে এ মামলায় যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী সমীর দাশগুপ্ত। এ সময় আদালতে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, আদালত যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ২৭ জুলাই এই মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন। এই মামলায় মোট ২৪ জন স্বাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আগেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছি। আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও আজ শেষ হয়েছে। ২৭ জুলাই রায় ঘোষণা করা হবে।’
এর আগে গত ২৯ মে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছিল মোট ২৯ জনকে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিনসহ ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। মামলার শুরু থেকে চুমকি কারণ পলাতক থাকলেও গত ২৩ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের শেষদিন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামল বিচারে আসে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে এপিবিএন চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় টেকনাফের ওসি প্রদীপকে কারাগারে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক। ওই বছর ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তাদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। তদন্তের পর টাকার অংকে কিছু পরিবর্তন হয়। ২০২১ সালের ২৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অর্জন এবং হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
ওসি প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন তা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে যে সব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয় তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট।
নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ওই বাড়ি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার মেয়ে চুমকি কারণের নামে দান করেন।
আয়কর বিবরণতে চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে, তাও স্বামী প্রদীপ দাশের ‘জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের পর স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে দেখানো ভুয়া ব্যবসা’ বলে অভিযোগ করা হয় অভিযোগপত্রে। মাছ চাষের ব্যবসার যে হিসেব দেখানো হয়েছে তার বাস্তবে অস্তিত্ব নেই বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।
এরআগে গত বছরের ২৯ জুন দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের জব্দ করা সম্পত্তি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের জিম্মায় থাকবে বলে আদেশ দেয় আদালত।
সিনহা হত্যা মামলার রায়ে প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে কক্সবাজার জেলা আদালত।